ময়মনসিংহ: নেত্রকোণায় সিএনজি ও অটোরিকশা চালকদের আটক ও মামলার ভয় দেখিয়ে চাঁদা আদায়ের অভিযোগে ট্রাফিক পুলিশের দুই কর্মকর্তাকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। মঙ্গলবার (২৩ জানুয়ারি) দুপুর ১টার দিকে ওই দুই কর্মকর্তাকে প্রত্যাহার করা হয়।
যে দুজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে তারা হলেন- নেত্রকোণা সদরের (টিআই) পরিদর্শক মৃদুল রঞ্জন দাস ও টিএসআই আকবর হোসেন। তাদের বর্তমান কর্মস্থলে প্রত্যাহার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা পুলিশ সুপার মো. ফয়েজ আহমেদ।
এদিকে ট্রাফিক পুলিশের চাঁদাবাজি ও হয়রানির প্রতিবাদে দ্বিতীয় দিনের মতো সড়ক অবরোধ করেন অটোটেম্পো, অটোরিকশা ও সিএনজিচালক শ্রমিকরা। জেলা শহরের মুক্তারপাড়া এলাকায় পৌরসভার সামনের প্রধান সড়ক মঙ্গলবার বেলা ১১টা থেকে ১টা পর্যন্ত অবরোধ করে দুই ট্রাফিক পুলিশের বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্লোগান দেন শ্রমিকরা। এ সময় শহরের প্রধান সড়কে যান চলাচল ব্যাহত হয়।
পরে মঙ্গলবার দুপুর ১টার দিকে নেত্রকোণার পৌর মেয়র নজরুল ইসলাম খান ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) শিবলী সাদিক পৌরসভার মোড়ে উপস্থিত হয়ে শ্রমিকদের দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দিলে শ্রমিকরা অবরোধ কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নেয়।
জেলা অটোটেম্পো, অটোরিকশা ও সিএনজিচালক শ্রমিক ইউনিয়নের চালকরা অভিযোগ করে বলেন, জেলার ট্রাফিক ইন্সপেক্টর মৃদুল রঞ্জন দাস দায়িত্বে আসার পর থেকেই চাঁদা না দিলে ট্রাফিক পুলিশ জেলা শহরের বিভিন্ন রাস্তার মোড়ে মোড়ে গাড়ি থামিয়ে নানা অজুহাতে একই গাড়ির বিরুদ্ধে মাসে ৩-৪ বার মামলা দিচ্ছে। বর্তমান দ্রব্যমূল্যের বাজারে সিএনজি চালকরা পরিবার-পরিজন নিয়ে জীবন চালাতে যেখানে হিমশিম খাচ্ছে, সেখানে আবার মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হয়ে দাঁড়ায়। ট্রাফিক পুলিশ মামলা দিয়েই ক্ষান্ত হয়নি, অনেক সময় তারা শ্রমিকদের তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে, বাবা-মাকে তুলেও গালিগালাজ করে।
সোমবার বেলা ১১টার দিকে কুড়পারের সিএনজিস্ট্যান্ডে গিয়ে ট্রাফিক পুলিশ আকবর হোসেন মামলা দিলে শ্রমিকরা ক্ষিপ্ত হয়ে রাস্তা অবরোধ করে। এ সময় ট্রাফিক ইন্সপেক্টর মৃদুল রঞ্জন দাসের অপসারণের দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন অটোটেম্পো, অটোরিকশা ও সিএনজিচালকরা।
শ্রমিকদের হয়রানির বিষয়ে জানতে চাইলে ট্রাফিক ইন্সপেক্টর মৃদুল রঞ্জন দাসের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করে রিসিভ না করায় কথা বলা সম্ভব হয়নি।
কুড়পাড়ে কর্তব্যরত ট্রাফিক পুলিশের (টিএসআই) আকবর হোসেন জানান, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে আমরা কুড়পাড় এলাকায় তিনটি গাড়ির বিরুদ্ধে মামলা দেই। এ সময় শ্রমিকরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে দুইটি গাড়ি জোর করে ছাড়িয়ে নেয়। আমরা তাদের আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়ার আহবান জানালে শ্রমিকরা ক্ষিপ্ত হয়ে আমাদের সঙ্গে হাতাহাতি করে।
জানতে চাইলে জেলা অটোটেম্পো, অটোরিকশা ও সিএনজিচালক শ্রমিক ইউনিয়নের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. বিল্লাল শেখ জানান, পুলিশের বেপরোয়া চাঁদাবাজিতে আমরা অতিষ্ঠ। নিয়মিত তাদের চাঁদা না দিলেই তারা ড্রাইভারদের আটকিয়ে মামলা দিয়ে হয়রানি করছে। শ্রমিকরা অতিষ্ঠ হয়ে এখন অবরোধে নেমেছেন। প্রশাসনের হয়রানি বন্ধ ও মামলার প্রত্যাহারের আশ্বাসে আমরা মঙ্গলবার বেলা দেড়টার দিকে অবরোধ প্রত্যাহার করি।
নেত্রকোনা পৌরসভার ৯নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও (প্যানেল মেয়র-২) হেলাল উদ্দিন শেখ বলেন, বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে। শ্রমিকদের ওপর অত্যাচার করার অভিযোগ রয়েছে। বিষয়টি নিয়ে পুলিশের ঊর্ধ্বতনদের সঙ্গে কথা বলা হয়েছে। আর কোনো নিরপরাধ শ্রমিক যেন মামলার হয়রানির শিকার না হয় সে বিষয়ে আশ্বাসের পর শ্রমিকরা অবরোধ প্রত্যাহার করেছেন।
জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মাদ লুৎফর রহমান বলেন, পুলিশের সঙ্গে সিএনজি শ্রমিকদের ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল। শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে আলাপ আলোচনা করে উদ্ভূত পরিস্থিতি সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। দুই কর্মকর্তাকে কর্মস্থল থেকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।