ময়মনসিংহ ০৯:৫৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

গজনী অবকাশ কেন্দ্রে পর্যটকের ঢল

ছবি: প্রতিদিনের ময়মনসিংহ

ময়মনসিংহ: প্রতি বছর নভেম্বর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত পাঁচ মাস মুখর থাকে শেরপুরের নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যবেষ্টিত গারো পাহাড়ের গজনী অবকাশ কেন্দ্র। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কারণে জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত পর্যটকশূন্য ছিল অবকাশ কেন্দ্রটি। ৭ জানুয়ারি নির্বাচন শেষ হওয়ার পর থেকে জমতে শুরু করেছে এ অবকাশ কেন্দ্র। জেলা ও জেলার বাইরে থেকে ভ্রমণপিপাসু মানুষ ও পর্যটকরা ছুটে আসছেন এ অবকাশ কেন্দ্রে।

বাংলাদেশের উত্তর সীমান্তবর্তী জেলা শেরপুর। গারো পাহাড়ের পাদদেশে ও ভারতের মেঘালয় রাজ্যের কোলঘেঁষে নদ-নদী আর পাহাড়ি সৌন্দর্যে ভরপুর সীমান্ত জেলা শেরপুর। এ জেলার বিশাল অংশজুড়ে রয়েছে গারো পাহাড়ের বিস্তৃতি। ঝিনাইগাতী উপজেলার কাংশা ইউনিয়নে অবস্থিত গজনী অবকাশ। এটি শেরপুর জেলা তথা বৃহত্তর ময়মনসিংহ বিভাগ এবং উত্তরাঞ্চলের প্রধান ও আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠেছে।

ছবি: প্রতিদিনের ময়মনসিংহ

প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যের অপরূপ লীলাভূমি গজনী অবকাশ ব্রিটিশ আমল থেকেই পিকনিক স্পট হিসেবে পরিচিত সবার মাঝে। দর্শনার্থীদের ভ্রমণ আরও আনন্দঘন করতে শেরপুর জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে ১৯৯৩ সালে এটিকে নতুন রূপে নির্মিত করা হয় গজনী অবকাশ কেন্দ্র হিসেবে। এ পর্যটন কেন্দ্রটি প্রায় ৯০ একর এলাকা জুড়ে বিস্তৃত পাহাড়ি সৌন্দর্য্যমণ্ডিত।

শেরপুরের গজনী পাহাড়ি এলাকায় রয়েছে সারি সারি গজারি, শাল, সেগুন, মহুয়া, আকাশমণি, ইউকেলিপটাস -সহ আরও শত শত নাম না জানা গাছগাছালি ও লতাপাতার বিন্যাস। পাহাড়, বনানী, ঝরনা, টিলা, লেক, হ্রদসহ প্রাকৃতিক ও কৃত্রিম সৌন্দর্য মিলে অন্যরকম প্রশান্তি এনে দেয় ভ্রমণকারীদের ক্লান্ত মনে। তাই তো প্রতি বছর শীতকালে গারো পাহাড়ের সৌন্দর্য অবলোকন করতে ভ্রমণপিপাসু মানুষ ছুটে আসেন এ প্রাকৃতিক লীলাভূমিতে।

এরই মধ্যে পাহাড়ি সৌন্দর্যের সঙ্গে যোগ হয়েছে কৃত্রিমভাবে নির্মাণ করা লেকের অবকাঠামো আর মনোমুগ্ধকর ভাস্কর্য বিনোদনের অনেক কিছু। পর্যটকরাও বলছেন, আগের তুলনায় অনেকটাই বদলে গেছে। সম্প্রতি উদ্বোধন করা হয়েছে গজনী অবকাশের লেকে দৃষ্টিনন্দন ভাসমান সেতু, লেকের পাশে সুবিশাল ওয়াটার কিংডম। এছাড়া ঝুলন্ত ব্রিজ, কেব্ল কার, জিপলাইনিং তো রয়েছেই। চোখে পড়ার মতো সবকিছু দেখে মুগ্ধ পর্যটকরাও। বিশেষ করে শিশুদের কাছে বেশ আকর্ষণীয় হয়েছে মিনি চিড়িয়াখানা ও শিশুপার্ক।

ছবি: প্রতিদিনের ময়মনসিংহ

এখানে প্রাকৃতিক দৃশ্যের পাশাপাশি রয়েছে অসংখ্য দোকানপাট। সেখান থেকে পর্যটকরা তাদের পছন্দের মতো জিনিসপত্র কিনতে পারে।

এসব দোকানে শিশুদের খেলনা এবং নারীদের বিভিন্ন প্রসাধনী ও শাড়ি-কাপড় থেকে শুরু করে রয়েছে ঘর সাজানোর নানা আসবাবপত্র। এবার গত দুই মাস ব্যবসা না হওয়ার কারণে হতাশ হয়েছেন অনেক ব্যবসায়ী, তবে তাদের কেউ কেউ সামনের দিনগুলোয় পর্যটক আরও বাড়বে বলে আশা ব্যক্ত করছেন।

শেরপুর জেলা প্রশাসক আব্দুল্লাহ আল খায়রুম জানান, এরই মধ্যে গজনী অবকাশে সারাদেশের পর্যটকদের আকর্ষণ করতে নেয়া হয়েছে নানা ব্যবস্থা এবং প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে নতুন নতুন বিভিন্ন রাইডস। পর্যটকদের নিরাপত্তার জন্য আনা হয়েছে পর্যটক পুলিশ। এছাড়া খুব শিগগিরই এখানে পর্যটন করপোরেশনের মোটেল তৈরি করা হবে। আগামী দিনেও আরও পদক্ষেপ নেয়া হবে বলে জানালেন জেলা প্রশাসক।

‘তুলসী মালা সুগন্ধে, পর্যটনের আনন্দে’ এ স্লোগানে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে শেরপুরের ব্র্যান্ডিং। আগামী দিনে এ অবকাশ কেন্দ্রের আকর্ষণ আরও বাড়ানো হলে সারাদেশে পর্যটকদের আনন্দ বাড়ানো যাবে বলে স্থানীয় সচেতন মহল মনে করছে।

গজনী অবকাশ কেন্দ্রে পর্যটকের ঢল

প্রকাশের সময়: ০১:০৬:০০ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৮ জানুয়ারী ২০২৪

ময়মনসিংহ: প্রতি বছর নভেম্বর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত পাঁচ মাস মুখর থাকে শেরপুরের নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যবেষ্টিত গারো পাহাড়ের গজনী অবকাশ কেন্দ্র। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কারণে জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত পর্যটকশূন্য ছিল অবকাশ কেন্দ্রটি। ৭ জানুয়ারি নির্বাচন শেষ হওয়ার পর থেকে জমতে শুরু করেছে এ অবকাশ কেন্দ্র। জেলা ও জেলার বাইরে থেকে ভ্রমণপিপাসু মানুষ ও পর্যটকরা ছুটে আসছেন এ অবকাশ কেন্দ্রে।

বাংলাদেশের উত্তর সীমান্তবর্তী জেলা শেরপুর। গারো পাহাড়ের পাদদেশে ও ভারতের মেঘালয় রাজ্যের কোলঘেঁষে নদ-নদী আর পাহাড়ি সৌন্দর্যে ভরপুর সীমান্ত জেলা শেরপুর। এ জেলার বিশাল অংশজুড়ে রয়েছে গারো পাহাড়ের বিস্তৃতি। ঝিনাইগাতী উপজেলার কাংশা ইউনিয়নে অবস্থিত গজনী অবকাশ। এটি শেরপুর জেলা তথা বৃহত্তর ময়মনসিংহ বিভাগ এবং উত্তরাঞ্চলের প্রধান ও আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠেছে।

ছবি: প্রতিদিনের ময়মনসিংহ

প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যের অপরূপ লীলাভূমি গজনী অবকাশ ব্রিটিশ আমল থেকেই পিকনিক স্পট হিসেবে পরিচিত সবার মাঝে। দর্শনার্থীদের ভ্রমণ আরও আনন্দঘন করতে শেরপুর জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে ১৯৯৩ সালে এটিকে নতুন রূপে নির্মিত করা হয় গজনী অবকাশ কেন্দ্র হিসেবে। এ পর্যটন কেন্দ্রটি প্রায় ৯০ একর এলাকা জুড়ে বিস্তৃত পাহাড়ি সৌন্দর্য্যমণ্ডিত।

শেরপুরের গজনী পাহাড়ি এলাকায় রয়েছে সারি সারি গজারি, শাল, সেগুন, মহুয়া, আকাশমণি, ইউকেলিপটাস -সহ আরও শত শত নাম না জানা গাছগাছালি ও লতাপাতার বিন্যাস। পাহাড়, বনানী, ঝরনা, টিলা, লেক, হ্রদসহ প্রাকৃতিক ও কৃত্রিম সৌন্দর্য মিলে অন্যরকম প্রশান্তি এনে দেয় ভ্রমণকারীদের ক্লান্ত মনে। তাই তো প্রতি বছর শীতকালে গারো পাহাড়ের সৌন্দর্য অবলোকন করতে ভ্রমণপিপাসু মানুষ ছুটে আসেন এ প্রাকৃতিক লীলাভূমিতে।

এরই মধ্যে পাহাড়ি সৌন্দর্যের সঙ্গে যোগ হয়েছে কৃত্রিমভাবে নির্মাণ করা লেকের অবকাঠামো আর মনোমুগ্ধকর ভাস্কর্য বিনোদনের অনেক কিছু। পর্যটকরাও বলছেন, আগের তুলনায় অনেকটাই বদলে গেছে। সম্প্রতি উদ্বোধন করা হয়েছে গজনী অবকাশের লেকে দৃষ্টিনন্দন ভাসমান সেতু, লেকের পাশে সুবিশাল ওয়াটার কিংডম। এছাড়া ঝুলন্ত ব্রিজ, কেব্ল কার, জিপলাইনিং তো রয়েছেই। চোখে পড়ার মতো সবকিছু দেখে মুগ্ধ পর্যটকরাও। বিশেষ করে শিশুদের কাছে বেশ আকর্ষণীয় হয়েছে মিনি চিড়িয়াখানা ও শিশুপার্ক।

ছবি: প্রতিদিনের ময়মনসিংহ

এখানে প্রাকৃতিক দৃশ্যের পাশাপাশি রয়েছে অসংখ্য দোকানপাট। সেখান থেকে পর্যটকরা তাদের পছন্দের মতো জিনিসপত্র কিনতে পারে।

এসব দোকানে শিশুদের খেলনা এবং নারীদের বিভিন্ন প্রসাধনী ও শাড়ি-কাপড় থেকে শুরু করে রয়েছে ঘর সাজানোর নানা আসবাবপত্র। এবার গত দুই মাস ব্যবসা না হওয়ার কারণে হতাশ হয়েছেন অনেক ব্যবসায়ী, তবে তাদের কেউ কেউ সামনের দিনগুলোয় পর্যটক আরও বাড়বে বলে আশা ব্যক্ত করছেন।

শেরপুর জেলা প্রশাসক আব্দুল্লাহ আল খায়রুম জানান, এরই মধ্যে গজনী অবকাশে সারাদেশের পর্যটকদের আকর্ষণ করতে নেয়া হয়েছে নানা ব্যবস্থা এবং প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে নতুন নতুন বিভিন্ন রাইডস। পর্যটকদের নিরাপত্তার জন্য আনা হয়েছে পর্যটক পুলিশ। এছাড়া খুব শিগগিরই এখানে পর্যটন করপোরেশনের মোটেল তৈরি করা হবে। আগামী দিনেও আরও পদক্ষেপ নেয়া হবে বলে জানালেন জেলা প্রশাসক।

‘তুলসী মালা সুগন্ধে, পর্যটনের আনন্দে’ এ স্লোগানে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে শেরপুরের ব্র্যান্ডিং। আগামী দিনে এ অবকাশ কেন্দ্রের আকর্ষণ আরও বাড়ানো হলে সারাদেশে পর্যটকদের আনন্দ বাড়ানো যাবে বলে স্থানীয় সচেতন মহল মনে করছে।