আইএনএস শারদুল, ভারতীয় নৌবাহিনীর একটি উভচর যুদ্ধজাহাজ, ১৬ অক্টোবর ২০২৪ তারিখে সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) দুবাইয়ের রাশিদ বন্দরে তার সফর সফলভাবে শেষ করেছে। এই সফরটি দীর্ঘমেয়াদী প্রশিক্ষণ মোতায়েনের অংশ ছিল এবং এটি ভারত ও আমিরাতের মধ্যে সামুদ্রিক সহযোগিতা জোরদার করার একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। এই সফরের সময় পেশাগত ও কূটনৈতিক বিভিন্ন উদ্যোগ বাস্তবায়িত হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে যৌথ প্রশিক্ষণ মহড়া, আন্তঃনৌবাহিনীর যোগাযোগ এবং সম্প্রদায়িক সংযোগের প্রচেষ্টা।
দুবাই সফরটি ভারতীয় মহাসাগর অঞ্চলে (আইওআর) প্রধান অংশীদারদের সাথে নৌবাহিনীর সম্পর্ক মজবুত করার ভারতের চলমান প্রচেষ্টার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। আইএনএস শারদুল এবং ইউএই নৌবাহিনীর মধ্যে যোগাযোগের মূল লক্ষ্য ছিল সামুদ্রিক অপারেশন পরিচালনায় সমন্বয় ও পারস্পরিক বোঝাপড়া বাড়ানো।
সফরের সময়, বিশেষত সমুদ্র শিক্ষানবিশরা, সংযুক্ত আরব আমিরাতের নৌ কর্মকর্তা প্রশিক্ষণ একাডেমি এবং ইউএই নৌবাহিনীর জাহাজ পরিদর্শনে অংশ নেন। এই সফরগুলি পেশাগত বিনিময়ের সুযোগ তৈরি করেছে, যেখানে উভয় নৌবাহিনী তাদের জ্ঞান ও প্রশিক্ষণ কৌশল ভাগ করে নিতে পেরেছে।
সফরের সময়সূচির অন্তর্ভুক্ত ছিল যৌথ প্রশিক্ষণ সেশন, যেখানে উভয় নৌবাহিনীর কর্মীরা একসঙ্গে প্রশিক্ষণ মহড়ায় অংশ নেয়। এর মাধ্যমে দক্ষতা ও সমন্বয় বাড়ানো হয়েছে। এছাড়াও যোগব্যায়াম কর্মসূচি এবং বন্ধুত্বপূর্ণ খেলাধুলার আয়োজন ছিল, যা সাংস্কৃতিক ও বিনোদনমূলক সংযোগ বাড়িয়েছে। এসব বিনিময় নৌবাহিনীর মধ্যে বন্ধুত্ব ও বিশ্বাস গড়ে তুলতে সহায়ক হয়েছে, যা সামুদ্রিক অপারেশন পরিচালনায় গুরুত্বপূর্ণ।
আইএনএস শারদুলের ডেকে একটি সংবর্ধনার আয়োজন করা হয়, যা এই কূটনৈতিক মিশনের গুরুত্বকে আরও জোরদার করে। এই সংবর্ধনায় ইউএই নৌবাহিনীর কর্মী, কূটনীতিক, এবং প্রবাসী ভারতীয় কমিউনিটির বিশিষ্ট ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।
এই সংবর্ধনা সামুদ্রিক নিরাপত্তা এবং আঞ্চলিক সহযোগিতা বাড়ানোর বিষয়ে উচ্চ পর্যায়ের আলোচনা করার সুযোগ করে দিয়েছে। উভয় দেশের কূটনীতিক এবং নৌ কর্মকর্তাদের উপস্থিতি আঞ্চলিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রতিরক্ষা ও কৌশলগত অংশীদারিত্ব গভীর করার যৌথ প্রতিশ্রুতি প্রকাশ করেছে।
আমিরাত নৌবাহিনীর সঙ্গে সামুদ্রিক সহযোগিতার মহড়া
দুবাই ত্যাগের পর, আইএনএস শারদুল আমিরাত নৌবাহিনীর জাহাজ আল কাওয়াসিত-এর সঙ্গে একটি সামুদ্রিক সহযোগিতা মহড়ায় (এমপিএক্স) অংশ নেয়। এই যৌথ মহড়ায় সমন্বিত নৌ কৌশল, যোগাযোগ মহড়া এবং অপারেশনাল কার্যক্রম অন্তর্ভুক্ত ছিল। এসব মহড়ার উদ্দেশ্য ছিল পারস্পরিক সমন্বয় ও প্রস্তুতি বাড়ানো, যা জলদস্যুতা, চোরাচালান এবং আঞ্চলিক অন্যান্য অবৈধ কার্যকলাপ মোকাবিলায় কার্যকর।
এমপিএক্স উভয় নৌবাহিনীর জটিল নৌ অপারেশন পরিচালনার সক্ষমতা প্রদর্শন করেছে এবং আঞ্চলিক নিরাপত্তা বজায় রাখতে দ্বিপাক্ষিক প্রশিক্ষণ ও সহযোগিতার গুরুত্বকে তুলে ধরেছে। এসব মহড়া দেখিয়েছে যে কীভাবে ভারত ও আমিরাতের নৌবাহিনী যৌথভাবে ভারতীয় মহাসাগর ও আরব উপসাগরের জলে শান্তি ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে পারে।
আইএনএস শারদুলের এই সফর কেবল ভারত ও আমিরাতের শক্তিশালী দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের প্রতিফলন নয়, এটি ভারতের বৃহত্তর সামুদ্রিক দৃষ্টিভঙ্গির সাথেও সামঞ্জস্যপূর্ণ, যা ‘সাগর’ উদ্যোগের অংশ। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী প্রবর্তিত এই উদ্যোগ আঞ্চলিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সহযোগিতার ওপর জোর দেয়।
আমিরাত, যা আরব সাগর ও ভারত মহাসাগরের মধ্যবর্তী কৌশলগত সংযোগস্থলে অবস্থিত, ভারতের আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও সামুদ্রিক প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করার প্রচেষ্টায় একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার।
ভারত ও আমিরাতের সম্পর্ক বহুমাত্রিক—অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও কৌশলগত। সামুদ্রিক সহযোগিতা এই সম্পর্কের একটি প্রধান ভিত্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে, কারণ উভয় দেশই এশিয়া, আফ্রিকা ও ইউরোপের মধ্যে সংযোগ রক্ষাকারী গুরুত্বপূর্ণ সামুদ্রিক পথগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আগ্রহী। সূত্র: ইন্ডিয়া নিউজ নেটওয়ার্ক