ময়মনসিংহ ০২:৩২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সম্পর্কোন্নয়নের বার্তা নিয়ে উজবেকিস্তান সফরে সীতারামণ

ভারতের অর্থ ও কর্পোরেট বিষয়ক মন্ত্রী নির্মলা সীতারামন ২০২৪ সালের ২৪ থেকে ২৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত উজবেকিস্তানে উচ্চ পর্যায়ের একটি ভারতীয় প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেবেন। এই সফরের লক্ষ্য হলো ভারত এবং উজবেকিস্তানের মধ্যে অর্থনৈতিক ও আর্থিক সহযোগিতা জোরদার করা। এই সফরে অর্থমন্ত্রী সমরকন্দে এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকের (এআইআইবি) ৯ম বার্ষিক গভর্নর বোর্ডের সভায় অংশগ্রহণ করবেন এবং উজবেকিস্তানের সঙ্গে একটি গুরুত্বপূর্ণ দ্বিপাক্ষিক বিনিয়োগ চুক্তি (বিআইটি) স্বাক্ষর করবেন, যা দ্বিপাক্ষিক অর্থনৈতিক সম্পর্ককে আরও শক্তিশালী করবে।

এআইআইবি-এর ৯ম বার্ষিক গভর্নর বোর্ডের সভা ২০২৪ সালের ২৫-২৬ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হবে। এআইআইবি-এর দ্বিতীয় বৃহত্তম শেয়ারহোল্ডার হিসেবে, ভারত এই প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন এজেন্ডায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই সভায় পরিকাঠামো বিনিয়োগ, টেকসই উন্নয়ন এবং বৈশ্বিক অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে।

এআইআইবি একটি বহুপাক্ষিক উন্নয়ন ব্যাংক হিসেবে এশিয়ায় পরিকাঠামো উন্নয়ন এবং বিনিয়োগের উপর গুরুত্ব দেয়, যেখানে সংযোগ বৃদ্ধি এবং সম্পদ সৃষ্টির প্রচার একটি প্রধান লক্ষ্য। এই বার্ষিক সভায় ৮০টিরও বেশি দেশের প্রতিনিধিরা বৈশ্বিক ইস্যু নিয়ে আলোচনা করতে একত্রিত হবেন।

ভারতের পক্ষ থেকে এআইআইবি-এর গভর্নর হিসেবে সীতারামন পরবর্তী তহবিলের উপায়, পরিকাঠামো প্রকল্পের জন্য সহযোগিতা এবং এশিয়ার অর্থনৈতিক উন্নয়নের কৌশল নিয়ে বিশদ আলোচনা করবেন বলে আশা করা হচ্ছে।

উজবেকিস্তানের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বিনিয়োগ চুক্তি স্বাক্ষর

অর্থমন্ত্রীর সফরের একটি প্রধান লক্ষ্য হলো ভারত ও উজবেকিস্তানের মধ্যে একটি দ্বিপাক্ষিক বিনিয়োগ চুক্তি (বিআইটি) স্বাক্ষর, যা উভয় দেশের মধ্যে দীর্ঘমেয়াদী অর্থনৈতিক সহযোগিতাকে শক্তিশালী করবে। এই চুক্তিটি স্বাক্ষর করবেন নির্মলা সীতারামন এবং উজবেকিস্তানের বিনিয়োগ, শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রী, যা উভয় দেশের মধ্যে বিনিয়োগের নতুন সুযোগ সৃষ্টি করবে।

বিআইটি চুক্তিটি উভয় দেশের বিনিয়োগকারীদের জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি করবে, বিনিয়োগের পারস্পরিক সুরক্ষা নিশ্চিত করবে এবং ব্যবসার মধ্যে আস্থা বৃদ্ধি করবে। এটি বিনিয়োগকারীদের ন্যায্য আচরণ এবং ঝুঁকি থেকে সুরক্ষা প্রদানের পাশাপাশি মসৃণ মূলধন স্থানান্তরকে সহজতর করবে। স্থিতিশীল বিনিয়োগ পরিবেশ প্রদান করে, এই চুক্তিটি ভারত ও উজবেকিস্তানের মধ্যে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগকে (এফডিআই) উৎসাহিত করবে।

বিআইটি স্বাক্ষর ভারত-উজবেকিস্তান অর্থনৈতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক, যা উভয় দেশের মধ্যে ক্রমবর্ধমান অংশীদারিত্বকে আরও শক্তিশালী করবে। এই চুক্তিটি উৎপাদন, পরিকাঠামো এবং পরিষেবা খাতের উন্নয়নে অবদান রাখবে, যা পারস্পরিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে সহায়ক হবে।

এআইআইবি বার্ষিক সভায় অংশগ্রহণ এবং বিআইটি স্বাক্ষরের পাশাপাশি, সীতারামন উজবেকিস্তান, কাতার, চীন এবং এআইআইবি প্রেসিডেন্টের সঙ্গে উচ্চপর্যায়ের দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করবেন। এই বৈঠকগুলি অর্থনৈতিক সহযোগিতা, বাণিজ্য এবং বিনিয়োগ সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু নিয়ে আলোচনা করার পাশাপাশি, জ্বালানি, পরিকাঠামো এবং অর্থের মতো খাতে নতুন সহযোগিতার সুযোগ অন্বেষণ করবে।

একটি বিশেষ বৈঠক হবে উজবেকিস্তানের প্রেসিডেন্ট শাভকাত মিরজিয়োয়েভের সঙ্গে, যেখানে ভারত ও উজবেকিস্তানের মধ্যে কৌশলগত অংশীদারিত্ব আরও গভীর করার বিষয়ে আলোচনা হবে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে উজবেকিস্তান ভারতের জন্য মধ্য এশিয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে।

ভারত-উজবেকিস্তান ব্যবসায়িক ফোরামের আলোচনা

সফরের সময়, কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী ভারত-উজবেকিস্তান ব্যবসায়িক ফোরামের আলোচনায় অংশ নেবেন, যেখানে উভয় দেশের শিল্প নেতৃবৃন্দ এবং ব্যবসায়িক প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করবেন। এই ফোরামটি উভয় দেশের ব্যবসায়িক চেম্বারগুলো যৌথভাবে আয়োজন করছে এবং বাণিজ্য সুযোগ, বিনিয়োগ সম্ভাবনা এবং বাজারে প্রবেশের বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করবে।

ফার্মাসিউটিক্যালস, টেক্সটাইল, কৃষি, তথ্য প্রযুক্তি এবং নবায়নযোগ্য শক্তির মতো খাতগুলোতে সহযোগিতার সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা হবে। ফোরামটি ব্যবসায়িক নেতাদের মধ্যে সরাসরি আলাপ-আলোচনা এবং বাণিজ্য ও বিনিয়োগের বাধা দূর করার ক্ষেত্রে সহায়ক হবে।

নিজের সরকারি কাজকর্মের পাশাপাশি, অর্থমন্ত্রী সীতারামন বেশ কয়েকটি সাংস্কৃতিক এবং শিক্ষামূলক কার্যক্রমেও অংশ নেবেন। তিনি উজবেকিস্তানের অন্যতম প্রধান শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সমরকন্দ স্টেট ইউনিভার্সিটি সফর করবেন এবং সেখানে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন। এই সফরটি অঞ্চলে ভারতের শিক্ষাগত সহযোগিতা এবং সাংস্কৃতিক বিনিময়ের গুরুত্বকে প্রতিফলিত করে।

এছাড়াও, অর্থমন্ত্রী তাশখন্দে লাল বাহাদুর শাস্ত্রী স্মৃতিসৌধ পরিদর্শন করবেন, যেখানে তিনি ১৯৬৬ সালে শহরে প্রয়াত প্রাক্তন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীকে শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন।

তিনি উজবেকিস্তানে বসবাসরত ভারতীয় সম্প্রদায়ের নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন এবং বিভিন্ন খাতের কমিউনিটি নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন। ভারতীয় সম্প্রদায় ভারত ও উজবেকিস্তানের মধ্যে সম্পর্ক জোরদারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, বিশেষত বাণিজ্য, বিনিয়োগ এবং সাংস্কৃতিক বিনিময় ক্ষেত্রে।

মধ্য এশিয়ার সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদারে ভারতের প্রতিশ্রুতি

এআইআইবি-এ ভারতের দ্বিতীয় বৃহত্তম শেয়ারহোল্ডার হিসেবে ভূমিকা ব্যাংকের সিদ্ধান্ত ও নীতিগুলিতে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলে। আসন্ন বার্ষিক সভা ভারতের জন্য টেকসই এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক পরিকাঠামো প্রকল্পগুলিতে আরও মনোযোগ দেওয়ার জন্য আহ্বান করার একটি সুযোগ হবে, বিশেষত উদীয়মান অর্থনীতিতে। এআইআইবি তার প্রভাব ও নাগাল বাড়ানোর লক্ষ্যে এগিয়ে যাওয়ায়, ব্যাংকের ভবিষ্যৎ অগ্রাধিকার নির্ধারণে ভারতের নেতৃত্ব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

অর্থমন্ত্রী সীতারামনের এই সফরটি এমন সময়ে হচ্ছে, যখন বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সহযোগিতা এবং বহুপাক্ষিকতার গুরুত্ব সর্বাধিক। এআইআইবি বার্ষিক সভায় অংশগ্রহণ, বিআইটি স্বাক্ষর এবং অন্যান্য দ্বিপাক্ষিক আলোচনা ভারতের কেন্দ্রীয় এশিয়ার সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ক গভীর করার প্রতিশ্রুতি এবং বৈশ্বিক উন্নয়ন উদ্যোগে এর ভূমিকা শক্তিশালী করার প্রমাণ দেয়।

উজবেকিস্তানে ২৪-২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ তারিখে তার সফরটি বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সহযোগিতায় ভারতের ভূমিকা বাড়ানোর একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে চিহ্নিত হবে। এআইআইবি বার্ষিক সভায় তার অংশগ্রহণ, দ্বিপাক্ষিক বিনিয়োগ চুক্তির স্বাক্ষর এবং বৈশ্বিক নেতাদের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ দ্বিপাক্ষিক আলোচনা এশিয়া ও এর বাইরের টেকসই পরিকাঠামো উন্নয়নে ভারতের প্রভাব আরও দৃঢ় করবে।

এই সফরটি ভারত ও উজবেকিস্তানসহ অন্যান্য প্রধান দেশগুলোর সঙ্গে অর্থনৈতিক এবং কূটনৈতিক সম্পর্ককে শক্তিশালী করার পাশাপাশি দীর্ঘমেয়াদী অর্থনৈতিক সহযোগিতা, বিনিয়োগের প্রচার এবং নতুন প্রবৃদ্ধির সুযোগ তৈরি করবে। সূত্র: ইন্ডিয়া নিউজ নেটওয়ার্ক

বিষয়:

সম্পর্কোন্নয়নের বার্তা নিয়ে উজবেকিস্তান সফরে সীতারামণ

প্রকাশের সময়: ০৯:৩৬:০০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪

ভারতের অর্থ ও কর্পোরেট বিষয়ক মন্ত্রী নির্মলা সীতারামন ২০২৪ সালের ২৪ থেকে ২৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত উজবেকিস্তানে উচ্চ পর্যায়ের একটি ভারতীয় প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেবেন। এই সফরের লক্ষ্য হলো ভারত এবং উজবেকিস্তানের মধ্যে অর্থনৈতিক ও আর্থিক সহযোগিতা জোরদার করা। এই সফরে অর্থমন্ত্রী সমরকন্দে এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকের (এআইআইবি) ৯ম বার্ষিক গভর্নর বোর্ডের সভায় অংশগ্রহণ করবেন এবং উজবেকিস্তানের সঙ্গে একটি গুরুত্বপূর্ণ দ্বিপাক্ষিক বিনিয়োগ চুক্তি (বিআইটি) স্বাক্ষর করবেন, যা দ্বিপাক্ষিক অর্থনৈতিক সম্পর্ককে আরও শক্তিশালী করবে।

এআইআইবি-এর ৯ম বার্ষিক গভর্নর বোর্ডের সভা ২০২৪ সালের ২৫-২৬ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হবে। এআইআইবি-এর দ্বিতীয় বৃহত্তম শেয়ারহোল্ডার হিসেবে, ভারত এই প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন এজেন্ডায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই সভায় পরিকাঠামো বিনিয়োগ, টেকসই উন্নয়ন এবং বৈশ্বিক অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে।

এআইআইবি একটি বহুপাক্ষিক উন্নয়ন ব্যাংক হিসেবে এশিয়ায় পরিকাঠামো উন্নয়ন এবং বিনিয়োগের উপর গুরুত্ব দেয়, যেখানে সংযোগ বৃদ্ধি এবং সম্পদ সৃষ্টির প্রচার একটি প্রধান লক্ষ্য। এই বার্ষিক সভায় ৮০টিরও বেশি দেশের প্রতিনিধিরা বৈশ্বিক ইস্যু নিয়ে আলোচনা করতে একত্রিত হবেন।

ভারতের পক্ষ থেকে এআইআইবি-এর গভর্নর হিসেবে সীতারামন পরবর্তী তহবিলের উপায়, পরিকাঠামো প্রকল্পের জন্য সহযোগিতা এবং এশিয়ার অর্থনৈতিক উন্নয়নের কৌশল নিয়ে বিশদ আলোচনা করবেন বলে আশা করা হচ্ছে।

উজবেকিস্তানের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বিনিয়োগ চুক্তি স্বাক্ষর

অর্থমন্ত্রীর সফরের একটি প্রধান লক্ষ্য হলো ভারত ও উজবেকিস্তানের মধ্যে একটি দ্বিপাক্ষিক বিনিয়োগ চুক্তি (বিআইটি) স্বাক্ষর, যা উভয় দেশের মধ্যে দীর্ঘমেয়াদী অর্থনৈতিক সহযোগিতাকে শক্তিশালী করবে। এই চুক্তিটি স্বাক্ষর করবেন নির্মলা সীতারামন এবং উজবেকিস্তানের বিনিয়োগ, শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রী, যা উভয় দেশের মধ্যে বিনিয়োগের নতুন সুযোগ সৃষ্টি করবে।

বিআইটি চুক্তিটি উভয় দেশের বিনিয়োগকারীদের জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি করবে, বিনিয়োগের পারস্পরিক সুরক্ষা নিশ্চিত করবে এবং ব্যবসার মধ্যে আস্থা বৃদ্ধি করবে। এটি বিনিয়োগকারীদের ন্যায্য আচরণ এবং ঝুঁকি থেকে সুরক্ষা প্রদানের পাশাপাশি মসৃণ মূলধন স্থানান্তরকে সহজতর করবে। স্থিতিশীল বিনিয়োগ পরিবেশ প্রদান করে, এই চুক্তিটি ভারত ও উজবেকিস্তানের মধ্যে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগকে (এফডিআই) উৎসাহিত করবে।

বিআইটি স্বাক্ষর ভারত-উজবেকিস্তান অর্থনৈতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক, যা উভয় দেশের মধ্যে ক্রমবর্ধমান অংশীদারিত্বকে আরও শক্তিশালী করবে। এই চুক্তিটি উৎপাদন, পরিকাঠামো এবং পরিষেবা খাতের উন্নয়নে অবদান রাখবে, যা পারস্পরিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে সহায়ক হবে।

এআইআইবি বার্ষিক সভায় অংশগ্রহণ এবং বিআইটি স্বাক্ষরের পাশাপাশি, সীতারামন উজবেকিস্তান, কাতার, চীন এবং এআইআইবি প্রেসিডেন্টের সঙ্গে উচ্চপর্যায়ের দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করবেন। এই বৈঠকগুলি অর্থনৈতিক সহযোগিতা, বাণিজ্য এবং বিনিয়োগ সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু নিয়ে আলোচনা করার পাশাপাশি, জ্বালানি, পরিকাঠামো এবং অর্থের মতো খাতে নতুন সহযোগিতার সুযোগ অন্বেষণ করবে।

একটি বিশেষ বৈঠক হবে উজবেকিস্তানের প্রেসিডেন্ট শাভকাত মিরজিয়োয়েভের সঙ্গে, যেখানে ভারত ও উজবেকিস্তানের মধ্যে কৌশলগত অংশীদারিত্ব আরও গভীর করার বিষয়ে আলোচনা হবে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে উজবেকিস্তান ভারতের জন্য মধ্য এশিয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে।

ভারত-উজবেকিস্তান ব্যবসায়িক ফোরামের আলোচনা

সফরের সময়, কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী ভারত-উজবেকিস্তান ব্যবসায়িক ফোরামের আলোচনায় অংশ নেবেন, যেখানে উভয় দেশের শিল্প নেতৃবৃন্দ এবং ব্যবসায়িক প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করবেন। এই ফোরামটি উভয় দেশের ব্যবসায়িক চেম্বারগুলো যৌথভাবে আয়োজন করছে এবং বাণিজ্য সুযোগ, বিনিয়োগ সম্ভাবনা এবং বাজারে প্রবেশের বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করবে।

ফার্মাসিউটিক্যালস, টেক্সটাইল, কৃষি, তথ্য প্রযুক্তি এবং নবায়নযোগ্য শক্তির মতো খাতগুলোতে সহযোগিতার সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা হবে। ফোরামটি ব্যবসায়িক নেতাদের মধ্যে সরাসরি আলাপ-আলোচনা এবং বাণিজ্য ও বিনিয়োগের বাধা দূর করার ক্ষেত্রে সহায়ক হবে।

নিজের সরকারি কাজকর্মের পাশাপাশি, অর্থমন্ত্রী সীতারামন বেশ কয়েকটি সাংস্কৃতিক এবং শিক্ষামূলক কার্যক্রমেও অংশ নেবেন। তিনি উজবেকিস্তানের অন্যতম প্রধান শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সমরকন্দ স্টেট ইউনিভার্সিটি সফর করবেন এবং সেখানে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন। এই সফরটি অঞ্চলে ভারতের শিক্ষাগত সহযোগিতা এবং সাংস্কৃতিক বিনিময়ের গুরুত্বকে প্রতিফলিত করে।

এছাড়াও, অর্থমন্ত্রী তাশখন্দে লাল বাহাদুর শাস্ত্রী স্মৃতিসৌধ পরিদর্শন করবেন, যেখানে তিনি ১৯৬৬ সালে শহরে প্রয়াত প্রাক্তন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীকে শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন।

তিনি উজবেকিস্তানে বসবাসরত ভারতীয় সম্প্রদায়ের নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন এবং বিভিন্ন খাতের কমিউনিটি নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন। ভারতীয় সম্প্রদায় ভারত ও উজবেকিস্তানের মধ্যে সম্পর্ক জোরদারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, বিশেষত বাণিজ্য, বিনিয়োগ এবং সাংস্কৃতিক বিনিময় ক্ষেত্রে।

মধ্য এশিয়ার সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদারে ভারতের প্রতিশ্রুতি

এআইআইবি-এ ভারতের দ্বিতীয় বৃহত্তম শেয়ারহোল্ডার হিসেবে ভূমিকা ব্যাংকের সিদ্ধান্ত ও নীতিগুলিতে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলে। আসন্ন বার্ষিক সভা ভারতের জন্য টেকসই এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক পরিকাঠামো প্রকল্পগুলিতে আরও মনোযোগ দেওয়ার জন্য আহ্বান করার একটি সুযোগ হবে, বিশেষত উদীয়মান অর্থনীতিতে। এআইআইবি তার প্রভাব ও নাগাল বাড়ানোর লক্ষ্যে এগিয়ে যাওয়ায়, ব্যাংকের ভবিষ্যৎ অগ্রাধিকার নির্ধারণে ভারতের নেতৃত্ব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

অর্থমন্ত্রী সীতারামনের এই সফরটি এমন সময়ে হচ্ছে, যখন বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সহযোগিতা এবং বহুপাক্ষিকতার গুরুত্ব সর্বাধিক। এআইআইবি বার্ষিক সভায় অংশগ্রহণ, বিআইটি স্বাক্ষর এবং অন্যান্য দ্বিপাক্ষিক আলোচনা ভারতের কেন্দ্রীয় এশিয়ার সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ক গভীর করার প্রতিশ্রুতি এবং বৈশ্বিক উন্নয়ন উদ্যোগে এর ভূমিকা শক্তিশালী করার প্রমাণ দেয়।

উজবেকিস্তানে ২৪-২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ তারিখে তার সফরটি বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সহযোগিতায় ভারতের ভূমিকা বাড়ানোর একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে চিহ্নিত হবে। এআইআইবি বার্ষিক সভায় তার অংশগ্রহণ, দ্বিপাক্ষিক বিনিয়োগ চুক্তির স্বাক্ষর এবং বৈশ্বিক নেতাদের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ দ্বিপাক্ষিক আলোচনা এশিয়া ও এর বাইরের টেকসই পরিকাঠামো উন্নয়নে ভারতের প্রভাব আরও দৃঢ় করবে।

এই সফরটি ভারত ও উজবেকিস্তানসহ অন্যান্য প্রধান দেশগুলোর সঙ্গে অর্থনৈতিক এবং কূটনৈতিক সম্পর্ককে শক্তিশালী করার পাশাপাশি দীর্ঘমেয়াদী অর্থনৈতিক সহযোগিতা, বিনিয়োগের প্রচার এবং নতুন প্রবৃদ্ধির সুযোগ তৈরি করবে। সূত্র: ইন্ডিয়া নিউজ নেটওয়ার্ক