ময়মনসিংহ ০৩:৫১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ভারত-আসিয়ান সম্পর্ক: কৌশলগত সম্ভাবনার উন্মুক্ত খাত

নিহার আর নায়েক: মে ২০২৪-এ তৃতীয়বারের মতো দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে মোদী সরকার পূর্বের প্রশাসনের তুলনায় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সাথে সম্পৃক্ততা আরও বাড়িয়েছে। জুলাই ২০২৪-এ থাইল্যান্ডের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ভারত সফরের মাধ্যমে এই প্রচেষ্টা শুরু হয়, এবং আগস্ট মাসে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমের ভারত সফরের মাধ্যমে তা অব্যাহত থাকে।

প্রধানমন্ত্রী মোদী ৩ ও ৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪-এ যথাক্রমে ব্রুনাই এবং সিঙ্গাপুরের আনুষ্ঠানিক সফর করেন। এর আগে, ২৯ আগস্ট, ভারতীয় পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী পবিত্র মারঘেরিতা প্যাসিফিক দ্বীপপুঞ্জ ফোরামের বৈঠকে ভারতের প্রতিনিধিত্ব করেন।

এই সফরের পূর্বে, ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এস জয়শঙ্কর ২৫ থেকে ২৭ জুলাই ২০২৪-এ লাওসে সফর করেন, যেখানে তিনি আসিয়ান-ভারত, পূর্ব এশিয়া সম্মেলন (ইএএস), এবং আসিয়ান আঞ্চলিক ফোরাম (এআরএফ) পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকে অংশ নেন।

২৯ জুলাই ২০২৪-এ ড. জয়শঙ্কর টোকিওতে কোয়াড পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকে অংশ নেন, যেখানে সদস্যরা আসিয়ান ঐক্য, কেন্দ্রীয়তা, এবং আসিয়ান-নেতৃত্বাধীন আঞ্চলিক কাঠামোর প্রতি তাদের অবিচল সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেন।

আসিয়ান-ভারত সম্পর্কের গুরুত্ব

ভারতের আসিয়ান সাথে গভীর সম্পর্ক আসিয়ান-কেন্দ্রীক আঞ্চলিক কাঠামোর ভিত্তিতে, আসিয়ান ঐক্য ও কেন্দ্রীয়তার প্রতি দৃঢ় প্রতিশ্রুতি এবং ইন্দো-প্যাসিফিক সম্পর্কে আসিয়ান দৃষ্টিভঙ্গির সাথে সম্পর্কিত। আসিয়ান-ভারত ব্যাপক কৌশলগত অংশীদারিত্বকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রচেষ্টায় এই সম্পর্ক আরো জোরদার হয়।

উল্লেখযোগ্যভাবে, ২০২৪ সাল ভারতের “অ্যাক্ট ইস্ট” নীতির দশম বার্ষিকী। এই নীতিটি প্রথম ২০১৪ সালের ৯ম পূর্ব এশিয়া সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী মোদী ঘোষণা করেছিলেন।

এই সময়ে দক্ষিণ চীন সাগরে উত্তেজনা বেড়েছিল, যখন ২০ জুন ২০২৪-এ চীনা কোস্ট গার্ড ফিলিপাইন নৌবাহিনীর স্বাধীন গতিবিধি রোধ করে, যা ইন্দো-প্যাসিফিকে উত্তেজনার সম্ভাবনা বাড়িয়েছিল।

এমন পরিস্থিতিতে, কোয়াডের সদস্য হিসেবে ভারতের রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা আসিয়ান দেশগুলিকে নিশ্চিন্ত করেছে। ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে ভারতের প্রতিশ্রুতি ছিল মূল উপাদান।

ভারত-আসিয়ান সম্পর্ক

১৯৯০-এর দশকে উভয় পক্ষের মধ্যে একটি বিস্তৃত অংশীদারিত্বের প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হয়েছিল, বিশেষত চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব মোকাবেলায়। ভারত তখন থেকে আসিয়ান দেশের সাথে অর্থনৈতিক সম্পর্ক মজবুত করতে চেয়েছিল এবং বিনিয়োগ বাড়ানোর লক্ষ্য রেখেছিল। ১৯৯২ সালে ভারত আসিয়ানের সাথে খাতীয় অংশীদারত্ব শুরু করে।

যখন এশিয়ার ভূ-রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক দৃশ্যপট, বিশেষ করে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে পরিবর্তিত হতে শুরু করে, ভারত-আসিয়ান অংশীদারিত্ব ধীরে ধীরে উন্নতি লাভ করে। ১৯৯৬ সালে ভারতের আসিয়ানের সাথে সংলাপ অংশীদারত্বের মর্যাদা পাওয়ার পর ২০০২ সালে তা শীর্ষ সম্মেলন পর্যায়ে উন্নীত হয়।

ভারত এবং আসিয়ান সম্পর্কের ক্রমবর্ধমান গুরুত্বকে স্বীকৃতি দিয়ে, ২০১২ সালে এটি কৌশলগত অংশীদারত্বে উন্নীত হয় এবং ২০২২ সালে তা আরও এগিয়ে “বৃহত্তর কৌশলগত অংশীদারত্বে” পরিণত হয়।

গত ৩০ বছর ধরে, ভারত-আসিয়ান সম্পর্ক বহুমুখী এবং বিস্তৃত সম্পৃক্ততার মাধ্যমে বিকশিত হয়েছে, যার মধ্যে সাতটি মন্ত্রিপর্যায়ের বৈঠক এবং অসংখ্য সরকারি পর্যায়ের আলোচনা অন্তর্ভুক্ত। ১৯৯২ সাল থেকে ভারত প্রতিটি আসিয়ান বৈঠকে সর্বোচ্চ স্তরে অংশগ্রহণ করে আসছে এবং উভয় পক্ষ একাধিক কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। প্রথম পরিকল্পনা ২০০৪ সালে শুরু হয় এবং সর্বশেষ পঞ্চম পরিকল্পনা ২০২০ সালে গৃহীত হয়, যা রাজনৈতিক, নিরাপত্তা, এবং অর্থনৈতিক উদ্যোগকে আরও শক্তিশালী করেছে।

ভারত-ব্রুনাই সম্পর্ক

এই প্রেক্ষাপটে প্রধানমন্ত্রী মোদীর ব্রুনাই সফর ভারতের দীর্ঘমেয়াদী এবং ফলপ্রসূ আসিয়ান পুনঃসম্পৃক্তি এবং সদস্য দেশগুলোর সাথে সম্পর্ক দৃঢ় করার একটি উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হয়।

ব্রুনাই সফরটি হিজ ম্যাজেস্টি সুলতান হাজি হাসানাল বোলকিয়ার আমন্ত্রণে অনুষ্ঠিত হয়েছিল এবং এটি কোনো ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রথম দ্বিপাক্ষিক সফর ছিল। এই সফরটি ভারত-ব্রুনাই কূটনৈতিক সম্পর্কের ৪০তম বার্ষিকীর সঙ্গে মিলে যায়।

ব্রুনাই তার কৌশলগত অবস্থান, প্রাচুর্যপূর্ণ সম্পদ এবং আসিয়ান সদস্যপদের কারণে ভারতকে নিয়মিতভাবে জ্বালানি এবং সামুদ্রিক পণ্য সরবরাহ করে আসছে।

এছাড়াও, ব্রুনাইতে অবস্থিত ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা (ইসরো)-এর টেলিমেট্রি ট্র্যাকিং ও টেলিকম্যান্ড স্টেশন উভয় দেশের মধ্যে বৈজ্ঞানিক সহযোগিতার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

এই সফরের সময় উভয় দেশের নেতারা প্রতিরক্ষা, যোগাযোগ, বাণিজ্য, বিনিয়োগ, জ্বালানি, স্থান, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি, স্বাস্থ্য ও ঔষধ, শিক্ষা এবং সাংস্কৃতিক আদান-প্রদানের মতো একাধিক ক্ষেত্র নিয়ে আলোচনা করেন। পাশাপাশি আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বিষয়েও মতবিনিময় করেন।

ভারত-সিঙ্গাপুর সম্পর্ক

২০২৪ সালে সিঙ্গাপুর সফরটি কৌশলগতভাবে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ ছিল, কারণ এটি ২০২৩ সালের জুলাই মাসে অনুষ্ঠিত আসিয়ান-ভারত পররাষ্ট্রমন্ত্রী সম্মেলনে গৃহীত কর্মপরিকল্পনার বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করে। এই সফরে ইন্ডিয়া-সিঙ্গাপুর মন্ত্রীপর্যায়ের বৈঠকের (আইএসএমআর) সময় স্বাক্ষরিত স্মারক, বিশেষত সেমিকন্ডাক্টর সম্পর্কিত সমঝোতা চুক্তি নিয়ে আলোচনা হয়।

সিঙ্গাপুর ভারতের আসিয়ান সম্পৃক্ততার একটি মূল অংশীদার। ঐতিহাসিক এবং সাংস্কৃতিক সম্পর্ক ছাড়াও, সিঙ্গাপুর ২০১৮ সাল থেকে ভারতে উল্লেখযোগ্য বৈদেশিক বিনিয়োগকারী দেশ হিসেবে পরিচিত। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ভারত সর্বাধিক বৈদেশিক বিনিয়োগ সিঙ্গাপুর থেকে পেয়েছে, যার পরিমাণ ১১.৭৭৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।

ভারত-সিঙ্গাপুর সম্পর্ক ২০১৫ সালে কৌশলগত অংশীদারত্বে উন্নীত হয় এবং ২০২২ সালে আইএসএমআর-এর গঠনের মাধ্যমে এই সম্পর্ক আরও প্রসারিত হয়। উভয় দেশের প্রধানমন্ত্রী এই সম্পর্ককে আরও গভীর এবং বিস্তৃত করার লক্ষ্যে ‘বৃহত্তর কৌশলগত অংশীদারত্ব’-এ উন্নীত করতে সম্মত হন।

উভয় দেশই আসিয়ান-কেন্দ্রীয়তার প্রতি তাদের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করে এবং ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের শান্তি, স্থিতিশীলতা, এবং সমৃদ্ধি বজায় রাখতে সহযোগিতা করার ইচ্ছা প্রকাশ করে।

পরিশেষ

উচ্চপর্যায়ের ঘন ঘন সফর এবং দ্বিপাক্ষিক ও বহুপাক্ষিক সম্পৃক্ততার উন্নয়ন ভারতের “অ্যাক্ট ইস্ট” নীতি এবং ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলের মূল অংশ হিসেবে আসিয়ান অঞ্চলের গুরুত্বকে তুলে ধরে। ভারতের আসিয়ান কেন্দ্রীয়তার প্রতি অবিচল সমর্থন এই অঞ্চলের অর্থনৈতিক, ভৌগোলিক, এবং সাংস্কৃতিক গুরুত্বের স্বীকৃতির প্রতিফলন।

সময়ের সাথে সাথে ভারত নিজেকে এই অঞ্চলে একটি বিশ্বস্ত অংশীদার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। আসিয়ানের জন্য, ভারত একটি প্রধান বাজার এবং নিরাপত্তা সহযোগিতায় একটি গুরুত্বপূর্ণ মিত্র হিসেবে বিবেচিত।

লেখক: এমপি-আইডিএসএ-র গবেষণা সহকারী; এই নিবন্ধে প্রকাশিত মতামত সম্পূর্ণভাবে ব্যক্তিগত। সূত্র: ইন্ডিয়া নিউজ নেটওয়ার্ক

বিষয়:

ভারত-আসিয়ান সম্পর্ক: কৌশলগত সম্ভাবনার উন্মুক্ত খাত

প্রকাশের সময়: ০৬:৫১:২১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪

নিহার আর নায়েক: মে ২০২৪-এ তৃতীয়বারের মতো দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে মোদী সরকার পূর্বের প্রশাসনের তুলনায় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সাথে সম্পৃক্ততা আরও বাড়িয়েছে। জুলাই ২০২৪-এ থাইল্যান্ডের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ভারত সফরের মাধ্যমে এই প্রচেষ্টা শুরু হয়, এবং আগস্ট মাসে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমের ভারত সফরের মাধ্যমে তা অব্যাহত থাকে।

প্রধানমন্ত্রী মোদী ৩ ও ৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪-এ যথাক্রমে ব্রুনাই এবং সিঙ্গাপুরের আনুষ্ঠানিক সফর করেন। এর আগে, ২৯ আগস্ট, ভারতীয় পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী পবিত্র মারঘেরিতা প্যাসিফিক দ্বীপপুঞ্জ ফোরামের বৈঠকে ভারতের প্রতিনিধিত্ব করেন।

এই সফরের পূর্বে, ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এস জয়শঙ্কর ২৫ থেকে ২৭ জুলাই ২০২৪-এ লাওসে সফর করেন, যেখানে তিনি আসিয়ান-ভারত, পূর্ব এশিয়া সম্মেলন (ইএএস), এবং আসিয়ান আঞ্চলিক ফোরাম (এআরএফ) পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকে অংশ নেন।

২৯ জুলাই ২০২৪-এ ড. জয়শঙ্কর টোকিওতে কোয়াড পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকে অংশ নেন, যেখানে সদস্যরা আসিয়ান ঐক্য, কেন্দ্রীয়তা, এবং আসিয়ান-নেতৃত্বাধীন আঞ্চলিক কাঠামোর প্রতি তাদের অবিচল সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেন।

আসিয়ান-ভারত সম্পর্কের গুরুত্ব

ভারতের আসিয়ান সাথে গভীর সম্পর্ক আসিয়ান-কেন্দ্রীক আঞ্চলিক কাঠামোর ভিত্তিতে, আসিয়ান ঐক্য ও কেন্দ্রীয়তার প্রতি দৃঢ় প্রতিশ্রুতি এবং ইন্দো-প্যাসিফিক সম্পর্কে আসিয়ান দৃষ্টিভঙ্গির সাথে সম্পর্কিত। আসিয়ান-ভারত ব্যাপক কৌশলগত অংশীদারিত্বকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রচেষ্টায় এই সম্পর্ক আরো জোরদার হয়।

উল্লেখযোগ্যভাবে, ২০২৪ সাল ভারতের “অ্যাক্ট ইস্ট” নীতির দশম বার্ষিকী। এই নীতিটি প্রথম ২০১৪ সালের ৯ম পূর্ব এশিয়া সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী মোদী ঘোষণা করেছিলেন।

এই সময়ে দক্ষিণ চীন সাগরে উত্তেজনা বেড়েছিল, যখন ২০ জুন ২০২৪-এ চীনা কোস্ট গার্ড ফিলিপাইন নৌবাহিনীর স্বাধীন গতিবিধি রোধ করে, যা ইন্দো-প্যাসিফিকে উত্তেজনার সম্ভাবনা বাড়িয়েছিল।

এমন পরিস্থিতিতে, কোয়াডের সদস্য হিসেবে ভারতের রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা আসিয়ান দেশগুলিকে নিশ্চিন্ত করেছে। ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে ভারতের প্রতিশ্রুতি ছিল মূল উপাদান।

ভারত-আসিয়ান সম্পর্ক

১৯৯০-এর দশকে উভয় পক্ষের মধ্যে একটি বিস্তৃত অংশীদারিত্বের প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হয়েছিল, বিশেষত চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব মোকাবেলায়। ভারত তখন থেকে আসিয়ান দেশের সাথে অর্থনৈতিক সম্পর্ক মজবুত করতে চেয়েছিল এবং বিনিয়োগ বাড়ানোর লক্ষ্য রেখেছিল। ১৯৯২ সালে ভারত আসিয়ানের সাথে খাতীয় অংশীদারত্ব শুরু করে।

যখন এশিয়ার ভূ-রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক দৃশ্যপট, বিশেষ করে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে পরিবর্তিত হতে শুরু করে, ভারত-আসিয়ান অংশীদারিত্ব ধীরে ধীরে উন্নতি লাভ করে। ১৯৯৬ সালে ভারতের আসিয়ানের সাথে সংলাপ অংশীদারত্বের মর্যাদা পাওয়ার পর ২০০২ সালে তা শীর্ষ সম্মেলন পর্যায়ে উন্নীত হয়।

ভারত এবং আসিয়ান সম্পর্কের ক্রমবর্ধমান গুরুত্বকে স্বীকৃতি দিয়ে, ২০১২ সালে এটি কৌশলগত অংশীদারত্বে উন্নীত হয় এবং ২০২২ সালে তা আরও এগিয়ে “বৃহত্তর কৌশলগত অংশীদারত্বে” পরিণত হয়।

গত ৩০ বছর ধরে, ভারত-আসিয়ান সম্পর্ক বহুমুখী এবং বিস্তৃত সম্পৃক্ততার মাধ্যমে বিকশিত হয়েছে, যার মধ্যে সাতটি মন্ত্রিপর্যায়ের বৈঠক এবং অসংখ্য সরকারি পর্যায়ের আলোচনা অন্তর্ভুক্ত। ১৯৯২ সাল থেকে ভারত প্রতিটি আসিয়ান বৈঠকে সর্বোচ্চ স্তরে অংশগ্রহণ করে আসছে এবং উভয় পক্ষ একাধিক কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। প্রথম পরিকল্পনা ২০০৪ সালে শুরু হয় এবং সর্বশেষ পঞ্চম পরিকল্পনা ২০২০ সালে গৃহীত হয়, যা রাজনৈতিক, নিরাপত্তা, এবং অর্থনৈতিক উদ্যোগকে আরও শক্তিশালী করেছে।

ভারত-ব্রুনাই সম্পর্ক

এই প্রেক্ষাপটে প্রধানমন্ত্রী মোদীর ব্রুনাই সফর ভারতের দীর্ঘমেয়াদী এবং ফলপ্রসূ আসিয়ান পুনঃসম্পৃক্তি এবং সদস্য দেশগুলোর সাথে সম্পর্ক দৃঢ় করার একটি উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হয়।

ব্রুনাই সফরটি হিজ ম্যাজেস্টি সুলতান হাজি হাসানাল বোলকিয়ার আমন্ত্রণে অনুষ্ঠিত হয়েছিল এবং এটি কোনো ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রথম দ্বিপাক্ষিক সফর ছিল। এই সফরটি ভারত-ব্রুনাই কূটনৈতিক সম্পর্কের ৪০তম বার্ষিকীর সঙ্গে মিলে যায়।

ব্রুনাই তার কৌশলগত অবস্থান, প্রাচুর্যপূর্ণ সম্পদ এবং আসিয়ান সদস্যপদের কারণে ভারতকে নিয়মিতভাবে জ্বালানি এবং সামুদ্রিক পণ্য সরবরাহ করে আসছে।

এছাড়াও, ব্রুনাইতে অবস্থিত ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা (ইসরো)-এর টেলিমেট্রি ট্র্যাকিং ও টেলিকম্যান্ড স্টেশন উভয় দেশের মধ্যে বৈজ্ঞানিক সহযোগিতার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

এই সফরের সময় উভয় দেশের নেতারা প্রতিরক্ষা, যোগাযোগ, বাণিজ্য, বিনিয়োগ, জ্বালানি, স্থান, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি, স্বাস্থ্য ও ঔষধ, শিক্ষা এবং সাংস্কৃতিক আদান-প্রদানের মতো একাধিক ক্ষেত্র নিয়ে আলোচনা করেন। পাশাপাশি আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বিষয়েও মতবিনিময় করেন।

ভারত-সিঙ্গাপুর সম্পর্ক

২০২৪ সালে সিঙ্গাপুর সফরটি কৌশলগতভাবে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ ছিল, কারণ এটি ২০২৩ সালের জুলাই মাসে অনুষ্ঠিত আসিয়ান-ভারত পররাষ্ট্রমন্ত্রী সম্মেলনে গৃহীত কর্মপরিকল্পনার বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করে। এই সফরে ইন্ডিয়া-সিঙ্গাপুর মন্ত্রীপর্যায়ের বৈঠকের (আইএসএমআর) সময় স্বাক্ষরিত স্মারক, বিশেষত সেমিকন্ডাক্টর সম্পর্কিত সমঝোতা চুক্তি নিয়ে আলোচনা হয়।

সিঙ্গাপুর ভারতের আসিয়ান সম্পৃক্ততার একটি মূল অংশীদার। ঐতিহাসিক এবং সাংস্কৃতিক সম্পর্ক ছাড়াও, সিঙ্গাপুর ২০১৮ সাল থেকে ভারতে উল্লেখযোগ্য বৈদেশিক বিনিয়োগকারী দেশ হিসেবে পরিচিত। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ভারত সর্বাধিক বৈদেশিক বিনিয়োগ সিঙ্গাপুর থেকে পেয়েছে, যার পরিমাণ ১১.৭৭৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।

ভারত-সিঙ্গাপুর সম্পর্ক ২০১৫ সালে কৌশলগত অংশীদারত্বে উন্নীত হয় এবং ২০২২ সালে আইএসএমআর-এর গঠনের মাধ্যমে এই সম্পর্ক আরও প্রসারিত হয়। উভয় দেশের প্রধানমন্ত্রী এই সম্পর্ককে আরও গভীর এবং বিস্তৃত করার লক্ষ্যে ‘বৃহত্তর কৌশলগত অংশীদারত্ব’-এ উন্নীত করতে সম্মত হন।

উভয় দেশই আসিয়ান-কেন্দ্রীয়তার প্রতি তাদের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করে এবং ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের শান্তি, স্থিতিশীলতা, এবং সমৃদ্ধি বজায় রাখতে সহযোগিতা করার ইচ্ছা প্রকাশ করে।

পরিশেষ

উচ্চপর্যায়ের ঘন ঘন সফর এবং দ্বিপাক্ষিক ও বহুপাক্ষিক সম্পৃক্ততার উন্নয়ন ভারতের “অ্যাক্ট ইস্ট” নীতি এবং ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলের মূল অংশ হিসেবে আসিয়ান অঞ্চলের গুরুত্বকে তুলে ধরে। ভারতের আসিয়ান কেন্দ্রীয়তার প্রতি অবিচল সমর্থন এই অঞ্চলের অর্থনৈতিক, ভৌগোলিক, এবং সাংস্কৃতিক গুরুত্বের স্বীকৃতির প্রতিফলন।

সময়ের সাথে সাথে ভারত নিজেকে এই অঞ্চলে একটি বিশ্বস্ত অংশীদার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। আসিয়ানের জন্য, ভারত একটি প্রধান বাজার এবং নিরাপত্তা সহযোগিতায় একটি গুরুত্বপূর্ণ মিত্র হিসেবে বিবেচিত।

লেখক: এমপি-আইডিএসএ-র গবেষণা সহকারী; এই নিবন্ধে প্রকাশিত মতামত সম্পূর্ণভাবে ব্যক্তিগত। সূত্র: ইন্ডিয়া নিউজ নেটওয়ার্ক