ময়মনসিংহ ০১:৩৩ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কাজান বৈঠক: বরফ গলছে ভারত-চীন সম্পর্কে

প্রফেসর শ্রীকান্ত কোন্ডাপল্লী: যদিও ভারত ও চীনের নেতারা সীমান্ত পরিস্থিতি নিয়ে কোনো যৌথ বিবৃতি বা আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেননি, তবে ২১ অক্টোবর ভারতীয় পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিসরির এ ঘোষণা যে ভারত আবার সীমান্তে টহল কার্যক্রম শুরু করবে, একটি ইতিবাচক বার্তা দিয়েছে। এটি বিভিন্ন কৌশলগত পদক্ষেপের ফলাফল, যা বছরের পর বছর ধরে সেনা মোতায়েন, পাহাড়ি যুদ্ধের কৌশল, কূটনৈতিক প্রচেষ্টা এবং বিভিন্ন পর্যায়ের আলোচনার মাধ্যমে সম্ভব হয়েছে।

সীমান্তে সম্পর্ক পুনরুদ্ধার

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং পাঁচ বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো ২৩ অক্টোবর রাশিয়ার কাজানে ১৬তম ব্রিকস সম্মেলনের সময় মিলিত হন এবং এই সমঝোতায় পৌঁছান। তাঁরা ২০০৩ সালে প্রতিষ্ঠিত বিশেষ প্রতিনিধি (এসআর) প্রক্রিয়া পুনরায় চালুর প্রস্তাব দেন। এই প্রক্রিয়ায় ২০১৯ সাল পর্যন্ত ২২টি আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়েছিল, তবে ২০২০ সালের গালওয়ান সংঘর্ষ এই প্রক্রিয়ার অগ্রগতি থামিয়ে দেয়।

ভারত ও চীন এ পর্যন্ত ২১টি কোর কমান্ডার পর্যায়ের বৈঠক এবং ৩১টি ভারত-চীন সীমান্ত বিষয়ক পরামর্শ ও সমন্বয় কার্যক্রম (ডব্লিউএমসিসি) এর অধীনে আলোচনা করেছে। পাশাপাশি, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এস. জয়শঙ্কর এবং জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল বিভিন্ন সময়ে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ইয়ির সাথে বৈঠক করেছেন।

চার বছরেরও বেশি সময় ধরে চলমান সামরিক অচলাবস্থা কাটিয়ে ডেপসাং ও দেমচক এলাকায় ভারতের পক্ষ থেকে টহল কার্যক্রম পুনরায় শুরু হওয়া একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে, যা সীমান্তে উত্তেজনা হ্রাসে, আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা আনয়নে এবং গ্লোবাল সাউথের দেশগুলোর মধ্যে সহযোগিতার উন্নয়নে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।

চীনের এই পদক্ষেপের পেছনের কারণ

২০১০ সালে চীনের প্রবৃদ্ধি ছিল ১০ শতাংশ, কিন্তু সাম্প্রতিককালে তা প্রায় ৫ শতাংশে নেমে এসেছে। অর্থনৈতিক অবনতি, রিয়েল এস্টেট খাতে মন্দা, স্থানীয় ঋণের চাপসহ বিভিন্ন কারণে চীন তার অবস্থান পরিবর্তনে বাধ্য হয়েছে।

নতুন দিল্লির উদ্বেগ এখন এই যে, চীনের এই প্রতিশ্রুতি কতটা দীর্ঘস্থায়ী হবে এবং দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে শান্তি ও স্থিতিশীলতা রক্ষায় তারা কতটা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। চীনের এই উদ্যোগ কৌশলগত হলেও ভারতকে সতর্ক থাকতে হবে এবং এই ব্যবস্থাগুলোর সফল বাস্তবায়নের ওপর নজর দিতে হবে।

দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের মৌলিক দিকের ওপর গুরুত্ব প্রদান করা প্রয়োজন

আগামী বছর ভারত ও চীন কূটনৈতিক সম্পর্কের ৭৫তম বার্ষিকী উদযাপন করবে। তবে সম্পর্কের মৌলিক দিক, যেমন- সীমানা বিরোধের সমাধান, এই বিষয়ে ভারতকে কৌশলী হতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী মোদি কাজান বৈঠকে প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংকে স্থিতিশীল দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের জন্য পারস্পরিক বিশ্বাসের প্রয়োজনীয়তার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন।

উপসংহার

যদিও উভয় দেশ সেনা প্রত্যাহার, টহল পুনরায় শুরু এবং সাময়িক তাঁবুগুলো ভেঙে ফেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তবে স্পষ্ট নয় যে বাফার জোন এবং স্থায়ী প্রতিরক্ষা কাঠামোগুলো সরানো হবে কিনা। এই উদ্যোগগুলো সফলভাবে বাস্তবায়িত হলে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণ সম্ভব হতে পারে।

উভয় পক্ষের কূটনৈতিক প্রচেষ্টার ফলে সীমান্তে শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য চেষ্টা করা সম্ভব হয়েছে।

লেখক: জওহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়ে চীনা অধ্যয়নের অধ্যাপক; এখানে প্রকাশিত মতামত তার নিজস্ব সূত্র: ইন্ডিয়া নিউজ নেটওয়ার্ক

বিষয়:

কাজান বৈঠক: বরফ গলছে ভারত-চীন সম্পর্কে

প্রকাশের সময়: ০৬:১৫:০৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৯ অক্টোবর ২০২৪

প্রফেসর শ্রীকান্ত কোন্ডাপল্লী: যদিও ভারত ও চীনের নেতারা সীমান্ত পরিস্থিতি নিয়ে কোনো যৌথ বিবৃতি বা আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেননি, তবে ২১ অক্টোবর ভারতীয় পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিসরির এ ঘোষণা যে ভারত আবার সীমান্তে টহল কার্যক্রম শুরু করবে, একটি ইতিবাচক বার্তা দিয়েছে। এটি বিভিন্ন কৌশলগত পদক্ষেপের ফলাফল, যা বছরের পর বছর ধরে সেনা মোতায়েন, পাহাড়ি যুদ্ধের কৌশল, কূটনৈতিক প্রচেষ্টা এবং বিভিন্ন পর্যায়ের আলোচনার মাধ্যমে সম্ভব হয়েছে।

সীমান্তে সম্পর্ক পুনরুদ্ধার

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং পাঁচ বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো ২৩ অক্টোবর রাশিয়ার কাজানে ১৬তম ব্রিকস সম্মেলনের সময় মিলিত হন এবং এই সমঝোতায় পৌঁছান। তাঁরা ২০০৩ সালে প্রতিষ্ঠিত বিশেষ প্রতিনিধি (এসআর) প্রক্রিয়া পুনরায় চালুর প্রস্তাব দেন। এই প্রক্রিয়ায় ২০১৯ সাল পর্যন্ত ২২টি আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়েছিল, তবে ২০২০ সালের গালওয়ান সংঘর্ষ এই প্রক্রিয়ার অগ্রগতি থামিয়ে দেয়।

ভারত ও চীন এ পর্যন্ত ২১টি কোর কমান্ডার পর্যায়ের বৈঠক এবং ৩১টি ভারত-চীন সীমান্ত বিষয়ক পরামর্শ ও সমন্বয় কার্যক্রম (ডব্লিউএমসিসি) এর অধীনে আলোচনা করেছে। পাশাপাশি, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এস. জয়শঙ্কর এবং জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল বিভিন্ন সময়ে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ইয়ির সাথে বৈঠক করেছেন।

চার বছরেরও বেশি সময় ধরে চলমান সামরিক অচলাবস্থা কাটিয়ে ডেপসাং ও দেমচক এলাকায় ভারতের পক্ষ থেকে টহল কার্যক্রম পুনরায় শুরু হওয়া একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে, যা সীমান্তে উত্তেজনা হ্রাসে, আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা আনয়নে এবং গ্লোবাল সাউথের দেশগুলোর মধ্যে সহযোগিতার উন্নয়নে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।

চীনের এই পদক্ষেপের পেছনের কারণ

২০১০ সালে চীনের প্রবৃদ্ধি ছিল ১০ শতাংশ, কিন্তু সাম্প্রতিককালে তা প্রায় ৫ শতাংশে নেমে এসেছে। অর্থনৈতিক অবনতি, রিয়েল এস্টেট খাতে মন্দা, স্থানীয় ঋণের চাপসহ বিভিন্ন কারণে চীন তার অবস্থান পরিবর্তনে বাধ্য হয়েছে।

নতুন দিল্লির উদ্বেগ এখন এই যে, চীনের এই প্রতিশ্রুতি কতটা দীর্ঘস্থায়ী হবে এবং দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে শান্তি ও স্থিতিশীলতা রক্ষায় তারা কতটা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। চীনের এই উদ্যোগ কৌশলগত হলেও ভারতকে সতর্ক থাকতে হবে এবং এই ব্যবস্থাগুলোর সফল বাস্তবায়নের ওপর নজর দিতে হবে।

দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের মৌলিক দিকের ওপর গুরুত্ব প্রদান করা প্রয়োজন

আগামী বছর ভারত ও চীন কূটনৈতিক সম্পর্কের ৭৫তম বার্ষিকী উদযাপন করবে। তবে সম্পর্কের মৌলিক দিক, যেমন- সীমানা বিরোধের সমাধান, এই বিষয়ে ভারতকে কৌশলী হতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী মোদি কাজান বৈঠকে প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংকে স্থিতিশীল দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের জন্য পারস্পরিক বিশ্বাসের প্রয়োজনীয়তার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন।

উপসংহার

যদিও উভয় দেশ সেনা প্রত্যাহার, টহল পুনরায় শুরু এবং সাময়িক তাঁবুগুলো ভেঙে ফেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তবে স্পষ্ট নয় যে বাফার জোন এবং স্থায়ী প্রতিরক্ষা কাঠামোগুলো সরানো হবে কিনা। এই উদ্যোগগুলো সফলভাবে বাস্তবায়িত হলে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণ সম্ভব হতে পারে।

উভয় পক্ষের কূটনৈতিক প্রচেষ্টার ফলে সীমান্তে শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য চেষ্টা করা সম্ভব হয়েছে।

লেখক: জওহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়ে চীনা অধ্যয়নের অধ্যাপক; এখানে প্রকাশিত মতামত তার নিজস্ব সূত্র: ইন্ডিয়া নিউজ নেটওয়ার্ক