রাশিয়ার কাজান শহরে বুধবার (২৩ অক্টোবর, ২০২৪) অনুষ্ঠিত ১৬তম ব্রিকস সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী মোদি বলেছেন, ভারত ব্রিকসের অধীনে সহযোগিতা বাড়ানোর জন্য সম্পূর্ণভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
সম্মেলনের ওপেন প্লেনারি সেশনে বক্তব্য রাখার সময় প্রধানমন্ত্রী মোদি বলেন, গত দুই দশকে ব্রিকস অনেক মাইলফলক অর্জন করেছে। “আমি নিশ্চিত, আগামীর দিনে এই সংস্থা বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আরও কার্যকর মাধ্যম হিসেবে আবির্ভূত হবে,” মন্তব্য করেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী মোদি যে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো তুলে ধরেছেন তা নিম্নরূপ:
১. নতুন সম্প্রসারিত রূপে ব্রিকস ৩০ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারের অর্থনীতিতে পরিণত হয়েছে। আমাদের অর্থনৈতিক সহযোগিতা বাড়াতে ব্রিকস বিজনেস কাউন্সিল এবং ব্রিকস উইমেন বিজনেস অ্যালায়েন্স বিশেষ ভূমিকা পালন করেছে।
২. এ বছর ব্রিকসের মধ্যে ডব্লিউটিও সংস্কার, কৃষিক্ষেত্রে বাণিজ্য সুবিধা, স্থিতিশীল সরবরাহ শৃঙ্খলা, ই-কমার্স এবং বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল নিয়ে যে ঐক্যমত্য হয়েছে, তা আমাদের অর্থনৈতিক সহযোগিতাকে শক্তিশালী করবে। এই সমস্ত উদ্যোগের মাঝে, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের স্বার্থের প্রতিও আমাদের মনোযোগ দিতে হবে।
৩. নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক গত ১০ বছরে গ্লোবাল সাউথের দেশগুলোর উন্নয়ন চাহিদার একটি গুরুত্বপূর্ণ বিকল্প হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। ভারতের গুজরাট ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স টেক সিটির উদ্বোধন এবং আফ্রিকা ও রাশিয়ায় আঞ্চলিক কেন্দ্রগুলো এই ব্যাংকের কার্যক্রমকে বাড়িয়েছে। প্রায় ৩৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের উন্নয়ন প্রকল্প অনুমোদিত হয়েছে।
৪. ভারতের সভাপতিত্বে ২০২১ সালে প্রস্তাবিত ব্রিকস স্টার্টআপ ফোরাম এ বছর চালু হবে। ভারতের নেওয়া রেলওয়ে রিসার্চ নেটওয়ার্ক উদ্যোগটি ব্রিকস দেশগুলোর মধ্যে লজিস্টিক্স ও সরবরাহ শৃঙ্খলার সংযোগ বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
৫. ব্রিকস দেশগুলো, ইউনিডোর সহযোগিতায়, শিল্প ৪.০ এর জন্য দক্ষ কর্মী তৈরির জন্য যে ঐক্যমত্যে পৌঁছেছে, তা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।
৬. ২০২২ সালে চালু হওয়া ব্রিকস ভ্যাকসিন আরএন্ডডি সেন্টার স্বাস্থ্য সুরক্ষা বৃদ্ধিতে সহায়ক হচ্ছে। আমরা ব্রিকস অংশীদারদের সাথে ভারতের সফল ডিজিটাল হেলথ অভিজ্ঞতা ভাগ করতে আগ্রহী।
৭. জলবায়ু পরিবর্তন আমাদের সাধারণ অগ্রাধিকারের বিষয়। রাশিয়ার সভাপতিত্বে ব্রিকস ওপেন কার্বন মার্কেট পার্টনারশিপের জন্য গৃহীত ঐক্যমত্যটি স্বাগত। ভারতে সবুজ প্রবৃদ্ধি, জলবায়ু সহনশীল অবকাঠামো এবং সবুজ রূপান্তরের উপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
৮. ভারত আন্তর্জাতিক সোলার অ্যালায়েন্স, দুর্যোগ সহনশীল অবকাঠামো জোট, মিশন লাইফ (লাইফস্টাইল ফর এনভায়রনমেন্ট), এবং ‘এক পেড মা কে নাম’ বা মায়ের নামে একটি গাছ – এসব উদ্যোগ নিয়েছে। গত বছর, কপ-২৮ এর সময়, আমরা ‘গ্রীন ক্রেডিট’ নামে একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ শুরু করেছি। আমি ব্রিকস অংশীদারদের এইসব উদ্যোগে যোগ দেওয়ার আমন্ত্রণ জানাচ্ছি।
৯. ব্রিকসের সমস্ত দেশে অবকাঠামো নির্মাণে বিশেষ জোর দেওয়া হচ্ছে। ভারতে আমরা গতি-শক্তি পোর্টাল নামে একটি ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম প্রতিষ্ঠা করেছি, যা মাল্টি-মডাল সংযোগ দ্রুত সম্প্রসারণে সাহায্য করছে। এর মাধ্যমে অবকাঠামো উন্নয়নের পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন সহজ হয়েছে এবং পরিবহন খরচ কমেছে। আমরা আমাদের অভিজ্ঞতা সকলের সাথে ভাগ করতে আগ্রহী।
১০. ব্রিকস দেশগুলোর মধ্যে আর্থিক সংহতি বাড়ানোর প্রচেষ্টাকে আমরা স্বাগত জানাই। স্থানীয় মুদ্রায় বাণিজ্য ও সীমান্ত পেরিয়ে সহজ অর্থপ্রদানের ব্যবস্থা আমাদের অর্থনৈতিক সহযোগিতাকে শক্তিশালী করবে। ভারতের ইউনিফাইড পেমেন্টস ইন্টারফেস (ইউপিআই) একটি বড় সফল উদাহরণ এবং এটি অনেক দেশে গৃহীত হয়েছে। গত বছর এটি সংযুক্ত আরব আমিরাতে চালু হয়েছিল। আমরা এই ক্ষেত্রেও ব্রিকসের অন্যান্য দেশগুলোর সাথে সহযোগিতা করতে পারি। সূত্র: ইন্ডিয়া নিউজ নেটওয়ার্ক