বৈশ্বিক শাসনব্যবস্থাকে আরো ন্যায়সংগত ও কার্যকর করতে, ব্রাজিল, জার্মানি, ভারত এবং জাপানের বিদেশমন্ত্রী—যাদের জি৪ নামে পরিচিত—৭৯তম জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সাইডলাইনে একত্রিত হয়ে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ (ইউএনএসসি) সংস্কারের জন্য একত্রে আহ্বান জানিয়েছেন। ২০২৪ সালের ২৩শে সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত এই গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন ব্রাজিলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাউরো ভিয়েরা, জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আনালেনা বেয়ারবক, ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস. জয়শঙ্কর, এবং জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইয়োকো কামিকাওয়া।
জি৪ দেশগুলো বহুদিন ধরেই জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ সংস্কারের পক্ষে কথা বলছে। তাদের মতে, বর্তমান কাঠামোটি আজকের ভূ-রাজনৈতিক বাস্তবতার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয় এবং এটি যথেষ্ট প্রতিনিধিত্বমূলক নয়। সম্প্রতি ২২ ও ২৩ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত 'ফিউচারের শীর্ষ সম্মেলন'-এ বৈশ্বিক নেতারা নিরাপত্তা পরিষদের জরুরি সংস্কারের আহ্বান জোরালো করেন, যা জি৪-এর উদ্যোগকে আরও গতিশীল করেছে।
এক যৌথ প্রেস বিবৃতিতে জি৪ মন্ত্রীরা উল্লেখ করেন, “জাতিসংঘকে কেন্দ্র করে বর্তমান বহুপাক্ষিক ব্যবস্থার বড় চ্যালেঞ্জগুলো স্পষ্ট।” তারা জোর দিয়ে বলেন যে নিরাপত্তা পরিষদের পূর্ণাঙ্গ সংস্কার আজকের ভূ-রাজনৈতিক বাস্তবতা প্রতিফলিত করতে অত্যন্ত প্রয়োজনীয় এবং এটি ভবিষ্যতের জন্য জাতিসংঘকে আরও উপযুক্ত করে তুলবে।
এই বৈঠকে ব্রাজিলের নেতৃত্ব বিশেষভাবে প্রশংসিত হয়। জার্মানি, ভারত এবং জাপানের মন্ত্রীরা ব্রাজিলের গ্লোবাল গভর্নেন্স রিফর্মের আহ্বানকে স্বাগত জানান, যা ব্রাজিল তাদের জি২০ সভাপতিত্বের সময়ে শুরু করেছে। এই উদ্যোগটি জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ সহ বৈশ্বিক শাসন প্রতিষ্ঠানে সংস্কার আনতে চায়, যা ২১শ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আরও কার্যকর হবে।
জি৪ মন্ত্রীরা নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী এবং অস্থায়ী সদস্যপদ উভয় ক্ষেত্রেই সম্প্রসারণের প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দেন। তাদের মতে, এ ধরনের সম্প্রসারণ পরিষদের বৈধতা বাড়াবে এবং এটি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের স্বার্থ আরও ভালভাবে প্রতিনিধিত্ব করতে পারবে। তারা উল্লেখ করেন যে, বহু জাতিসংঘ সদস্য দেশ এই সম্প্রসারণকে সমর্থন করে এবং আন্তঃসরকার আলোচনা (আইজিএন)-তে নিরাপত্তা পরিষদকে আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক করার প্রয়োজনীয়তা নিয়মিত আলোচিত হয়।
জি৪ বিশেষভাবে উন্নয়নশীল দেশগুলির অংশগ্রহণ বাড়ানোর গুরুত্ব তুলে ধরে, যারা নিরাপত্তা পরিষদে উল্লেখযোগ্যভাবে কম প্রতিনিধিত্ব পায়। আফ্রিকা, এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল, এবং লাতিন আমেরিকা ও ক্যারিবীয় অঞ্চলকে এই ক্ষেত্রে আরও প্রতিনিধিত্ব দেওয়ার প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দেওয়া হয়, যা আফ্রিকার সাধারণ অবস্থান (ইজুলউইনি কনসেনসাস) এবং সির্তে ঘোষণা অনুসারে প্রস্তাবিত হয়েছে।
জি৪ মন্ত্রীরা ৭৮তম জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে নিরাপত্তা পরিষদের সংস্কার প্রক্রিয়া অগ্রসর করার পদক্ষেপগুলি স্বীকার করলেও, তারা উল্লেখযোগ্য অগ্রগতির অভাব নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন এবং পাঠ-ভিত্তিক আলোচনার অবিলম্বে প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন। তারা জাতিসংঘ সনদ এবং সাধারণ পরিষদের নিয়ম অনুযায়ী সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়া মেনে চলার জন্য সব সদস্য দেশকে আহ্বান জানান।
জি৪ মন্ত্রীরা জাতিসংঘের ৮০তম বার্ষিকী ২০২৫ সালের আগে নিরাপত্তা পরিষদের সংস্কারে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জনের গুরুত্বের উপর জোর দেন। তারা সব সদস্য রাষ্ট্রের সঙ্গে সুসমন্বিত আলোচনা চালিয়ে যেতে সম্মত হন এবং একটি সর্বসম্মত সংস্কার মডেল নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন।
মন্ত্রীগণ পরস্পরের স্থায়ী সদস্যপদ প্রার্থিতার প্রতি তাদের সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেন এবং তারা একটি গণতান্ত্রিক, স্বচ্ছ এবং কার্যকর নিরাপত্তা পরিষদ প্রতিষ্ঠায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
জি৪ এর এই সংস্কারের আহ্বান একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে এসেছে, যখন বৈশ্বিক শাসনব্যবস্থায় পরিবর্তনের প্রয়োজন তীব্রতর। জি৪ মন্ত্রীরা মনে করেন, বিশ্ব ক্রমবর্ধমান জটিল সমস্যার মুখোমুখি হওয়ার সাথে সাথে নিরাপত্তা পরিষদকেও সময়োপযোগী হওয়া প্রয়োজন। সূত্র: ইন্ডিয়া নিউজ নেটওয়ার্ক
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সাইফুল আলম তুহিন
ইমেইল: news@pratidinermymensingh.com
©সর্বস্বত্ব ২০১৬-২০২৪ | প্রতিদিনের ময়মনসিংহ