প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আসন্ন মার্কিন সফর, ২১ থেকে ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪ পর্যন্ত, বৈশ্বিক গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা মোকাবিলা এবং প্রধান আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সাথে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক মজবুত করতে ভূমিকা পালন করবে। কোয়াড নেতাদের সম্মেলন এবং জাতিসংঘের “সামিট অফ দ্য ফিউচার” সহ উচ্চ পর্যায়ের কয়েকটি ইভেন্ট নিয়ে এই সফর ভারতের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কূটনৈতিক পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে, যা একটি দ্রুত পরিবর্তনশীল বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে ভারতের অবস্থান শক্তিশালী করবে।
প্রধানমন্ত্রীর সফরের প্রথম উল্লেখযোগ্য ইভেন্ট হলো ২১ সেপ্টেম্বর উইলমিংটন, ডেলাওয়ারে চতুর্থ কোয়াড নেতাদের সম্মেলন, যা প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের নিজ শহরে অনুষ্ঠিত হবে। এই সম্মেলনটি চারটি সদস্য দেশ—ভারত, যুক্তরাষ্ট্র, জাপান এবং অস্ট্রেলিয়ার জন্য গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে তারা নিজেদের সহযোগিতার অগ্রগতি মূল্যায়ন করবে এবং বিশেষ করে ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে ভবিষ্যতের অগ্রাধিকার নির্ধারণ করবে।
কোয়াড ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য অর্জনে এবং শান্তি, সমৃদ্ধি এবং স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে কাজ করছে বলে জানিয়েছেন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিসরি। ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ তারিখে একটি পূর্বসফর ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, “আমাদের এজেন্ডা স্বাস্থ্য নিরাপত্তা, জলবায়ু পরিবর্তন, গুরুত্বপূর্ণ ও উদীয়মান প্রযুক্তি, অবকাঠামো, সংযোগ, সামুদ্রিক নিরাপত্তা এবং সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইকে অন্তর্ভুক্ত করে।” তিনি আরও যোগ করেন যে, নেতাদের আলোচনার মাধ্যমে এই চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলার নতুন পদক্ষেপ নেওয়া হতে পারে, যেখানে ইন্দো-প্রশান্ত অঞ্চলের প্রতি বিশেষ মনোযোগ থাকবে।
এই বছরের কোয়াড সম্মেলনের একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো নতুন উদ্যোগ ‘ক্যান্সার মুনশট’-এর উন্মোচন। কোয়াড সদস্য দেশগুলো যৌথভাবে এই প্রকল্পের মাধ্যমে জরায়ু ক্যান্সারের বাড়তি ঝুঁকির বিরুদ্ধে লড়াই করার পদক্ষেপ নেবে, বিশেষ করে ইন্দো-প্রশান্ত অঞ্চলে। পররাষ্ট্র সচিব মিসরি বলেন, “এই উদ্যোগের মাধ্যমে, কোয়াড ক্যান্সার প্রতিরোধ, সনাক্তকরণ, চিকিৎসা এবং রোগীদের উপর এর প্রভাব কমানোর জন্য নতুন কৌশল প্রয়োগ করবে। প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে, আমরা ইন্দো-প্রশান্ত অঞ্চলে জরায়ু ক্যান্সারের ঝুঁকি হ্রাসে সহযোগিতা করব।”
প্রধানমন্ত্রী মোদির কোয়াড সম্মেলনে অংশগ্রহণকে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে কৌশলগত সম্পর্ক আরও মজবুত করার সুযোগ হিসেবে দেখা হচ্ছে। মোদি এবং প্রেসিডেন্ট বাইডেনের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় প্রতিরক্ষা, নিরাপত্তা এবং উদ্ভাবনী প্রযুক্তি নিয়ে আলোচনা হবে বলে আশা করা হচ্ছে। পররাষ্ট্র সচিব মিসরি বলেন, “তারা ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে ব্যাপক কৌশলগত অংশীদারিত্বের পর্যালোচনা করবেন, যা আজ প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রকে অন্তর্ভুক্ত করে। বর্তমানে দুই দেশের মধ্যে ৫০টিরও বেশি দ্বিপাক্ষিক আলোচনা এবং যোগাযোগ মাধ্যম রয়েছে।”
প্রধানমন্ত্রী মোদির সাথে জাপান এবং অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রীর দ্বিপাক্ষিক বৈঠকেরও সম্ভাবনা রয়েছে।
জাতিসংঘ সামিট অফ দ্য ফিউচার
২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ তারিখে প্রধানমন্ত্রী মোদি নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সামিট অফ দ্য ফিউচার-এ বক্তৃতা দেবেন। এই সম্মেলনে বিশ্ব নেতারা বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বহুপক্ষীয় সমাধান খুঁজতে একত্রিত হবেন, যেখানে জলবায়ু পরিবর্তন, ডিজিটাল বৈষম্য, এবং শান্তি ও নিরাপত্তার বিষয়গুলো বিশেষভাবে গুরুত্ব পাবে।
পররাষ্ট্র সচিব মিসরি বলেন, “এই সম্মেলন এমন সময়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে, যখন বিশ্ব সংঘাত, উত্তেজনা এবং বিভক্তিতে পূর্ণ। বিশ্বে উন্নয়নের অভাব স্পষ্ট এবং বর্তমান ঘটনাগুলোর কারণে বৈশ্বিক দক্ষিণ অঞ্চল পিছিয়ে পড়ার ঝুঁকিতে রয়েছে।” প্রধানমন্ত্রী মোদি এই সম্মেলনে ভারতের উন্নয়নমূলক, জলবায়ু-সংক্রান্ত এবং শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টার উপর আলোকপাত করবেন বলে আশা করা হচ্ছে, বিশেষ করে এই বছরের শুরুতে অনুষ্ঠিত ‘ভয়েস অফ দ্য গ্লোবাল সাউথ’ সম্মেলনের নেতৃত্বের প্রসঙ্গে।
জাতিসংঘের সামিটে ভারতের প্রধান অগ্রাধিকার হবে অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নকে উৎসাহিত করা, ডিজিটাল পাবলিক অবকাঠামো ব্যবহার করা, এবং বৈশ্বিক শাসন ব্যবস্থায় সংস্কারের জন্য চাপ প্রয়োগ করা।
প্রধানমন্ত্রী মোদির মার্কিন সফরের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো ২২ সেপ্টেম্বর লং আইল্যান্ড, নিউইয়র্কে ভারতীয় প্রবাসীদের উদ্দেশ্যে তার ভাষণ। ভারতীয় প্রবাসীরা ভারত-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের একটি গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ, এবং তারা দুই দেশের মধ্যে জীবন্ত সেতু হিসেবে কাজ করে চলেছেন।
ব্যবসা এবং অর্থনৈতিক ইস্যুতে গুরুত্ব
প্রধানমন্ত্রী মোদি শীর্ষস্থানীয় সিইওদের সাথে একটি ব্যবসায়িক গোলটেবিল বৈঠকে অংশ নেবেন, যেখানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, কোয়ান্টাম কম্পিউটিং, সেমিকন্ডাক্টর এবং বায়োটেকনোলজি খাত নিয়ে আলোচনা হবে। এই বৈঠকগুলি যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগ এবং উদীয়মান প্রযুক্তি ক্ষেত্রে সহযোগিতার নতুন পথ উন্মোচন করবে বলে আশা করা হচ্ছে। পররাষ্ট্র সচিব মিসরি উল্লেখ করেছেন যে, এই বৈঠকে এমন খাতগুলো নিয়ে আলোচনা হবে, যেখানে ভারত উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি করেছে।
বৈশ্বিক অংশীদারিত্ব এবং অর্থনৈতিক সহযোগিতা প্রসঙ্গে, মোদির সফরে ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অর্থনৈতিক কাঠামো এবং মাদকের নীতি নিয়ে একটি সমঝোতা স্মারক বিনিময়ের সম্ভাবনা রয়েছে। আইপিইএফ চুক্তিগুলো অর্থনৈতিক সহযোগিতা, পরিচ্ছন্ন জ্বালানি এবং একটি সুষ্ঠু অর্থনৈতিক ব্যবস্থা নিয়ে কাজ করবে, আর মাদক কাঠামো যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের মধ্যে মাদক নিয়ন্ত্রণ এবং নিয়ন্ত্রণের উপর ফোকাস করবে।
প্রধানমন্ত্রী মোদির মার্কিন সফর এমন সময়ে হচ্ছে, যখন বিশ্ব জটিল সংকটের সম্মুখীন। কোয়াড সম্মেলন, জাতিসংঘের সামিট এবং ব্যবসায়ী নেতাদের সাথে তার বৈঠকগুলো ভারতের বৈশ্বিক অবস্থানকে শক্তিশালী করবে এবং বহুপাক্ষিক প্রতিক্রিয়াগুলোকে প্রভাবিত করতে সহায়তা করবে। কূটনৈতিক প্রচেষ্টার মাধ্যমে ভারত ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। সূত্র: ইন্ডিয়া নিউজ নেটওয়ার্ক
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সাইফুল আলম তুহিন
ইমেইল: news@pratidinermymensingh.com
©সর্বস্বত্ব ২০১৬-২০২৪ | প্রতিদিনের ময়মনসিংহ