ময়মনসিংহ ০৪:১৪ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সম্পর্কে গতি আনবে ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ভারত সফর

দু’দিনের সফরে দিল্লি এসে ভারতের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি দ্রুত বাস্তবায়িত করার লক্ষ্যে বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক সারলেন ব্রিটিশ বিদেশমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি। পাশাপাশি আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা নিয়েও কথা হয়েছে দুই নেতার। বাণিজ্যমন্ত্রী পীযূষ গয়ালের সঙ্গে দেখা করেছেন ল্যামি। তাঁর মন্তব্য, ‘‘একবিংশ শতকে সুপার পাওয়ার হিসেবে উঠে আসছে ভারত। মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি আমাদের সম্পর্ককে আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ভিত।’’

ব্রিটেনের পক্ষ থেকে আগেই জানানো হয়েছিল, বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আলোচনা অন্তিম স্তরে পৌঁছেছে এবং খুব শীঘ্রই চুক্তি সই হবে বলে আশা করা যায়। বাণিজ্য চুক্তির মোট ২৬টি অধ্যায়ের মধ্যে ১৬টিতে ঐকমত্য হয়ে গিয়েছে বলেও জানানো হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বরাবরই যুক্তরাজ্যের সঙ্গে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু এবং সমতাভিত্তিক মুক্ত বাণিজ্য চালু করতে আগ্রহী।

কূটনৈতিক মহলের বক্তব্য, মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি করতে হলে সংশ্লিষ্ট দু’টি দেশকেই আমদানি শুল্ক হয় ছেঁটে ফেলতে হবে, অথবা একেবারে কমিয়ে আনতে হবে, যাতে একে অন্যের বাজারে সহজেই বেশির ভাগ পণ্য প্রবেশ করাতে পারে। স্কচ-হুইস্কির ক্ষেত্রে এই ছাড় পেতে খুবই আগ্রহী ব্রিটেন। কিন্তু ভারত এখনও মনস্থির করে উঠতে পারেনি।

প্রসঙ্গত, বাণিজ্য নিয়ে আলোচনার জন্য ভারতে গেছেন যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি। এই সফরে তিনি ভারতের কয়েক মন্ত্রী ও ব্যবসায়িক নেতার সঙ্গে বৈঠক করেছেন। ভারত ও বৈশ্বিক দক্ষিণের সঙ্গে ব্রিটেনের সম্পর্ক নতুন করে শুরু করার উদ্যোগ হিসেবে দেখা হচ্ছে এই সফরকে।

ল্যামি ভারতকে যুক্তরাজ্যের ‘অপরিহার্য মিত্র’ বলে অভিহিত করেছেন। অর্থনীতিতে সমৃদ্ধি ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব প্রতিরোধে ভারতের সাফল্যের প্রশংসা করেছেন তিনি। ভারত বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি হতে যাচ্ছে। যুক্তরাজ্যের লেবার সরকার এই দেশের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি করার ব্যাপারে বেশ আগ্রহী। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ল্যামির এই সফরের উদ্দেশ্যও এ ধরনের চুক্তি।

মাত্র তিন সপ্তাহ আগে যুক্তরাজ্যে নতুন সরকার গঠন করেছে স্যার কিয়ার স্টারমারের নেতৃত্বাধীন দল লেবার। বিবিসি বলেছে, এই অল্প সময়ের মধ্যেই ভারতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী পাঠানোর মধ্য দিয়ে দেশটিকে যে তারা খুব গুরুত্বের সঙ্গে নিচ্ছে, তা প্রতীয়মান হয়। লেবার যদি প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত করতে চায়, তা হলে ভারতের সঙ্গে আরও বেশি বাণিজ্য করতে হবে।

উল্লেখ্য, ভারতের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি করার জন্য যুক্তরাজ্য প্রায় দুই বছর ধরেই চেষ্টা করছে। ভারত গত মার্চে নরওয়ে, সুইজারল্যান্ড ও আইসল্যান্ডের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি করেছে। এসব দেশ ইউরোপিয়ান ইউনিয়নভুক্ত নয়। এদিকে, এই মাসের শুরুতে ল্যামি তার প্রথম বিদেশ সফরের অংশ হিসেবে ইউরোপ সফর করেছেন। ওই সফরে তিনি বেশ কয়েক ইউরোপীয় নেতার সঙ্গে বৈঠক করেছেন। ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সঙ্গে যুক্তরাজ্যের সম্পর্ক জোরদার করতে তিনি ওই সফর করেন।

তবে তার চলমান ভারত সফর অর্থনীতির চেয়েও বেশি কিছু বলে ধরা হচ্ছে। কারণ বৈশ্বিক দক্ষিণে ভারত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শক্তি। ল্যাম বলেছেন, তিনি এই অঞ্চলের উন্নয়নশীল দেশগুলোর সঙ্গে ব্রিটেনের সম্পর্ক নতুন করে শুরু করতে চান।

এছাড়া, সাতটি বিষয়ে গুরুত্ব আরোপ পূর্বক ভারত-ইউকে প্রযুক্তি নিরাপত্তা উদ্যোগ আরম্ভ হয়েছে। ভারত ও যুক্তরাজ্য উভয় দেশের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টাগণ এই যৌথ প্রযুক্তি নিরাপত্তা উদ্যোগের সমন্বয় করবেন। সেগুলো যথাক্রমে, টেলিকম, খনিজ, সেমিকন্ডাক্টর, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স, কোয়ান্টাম, বায়োটেকনোলজি এবং হেলথটেক; এবং, উন্নত উপকরণ ইত্যাদি। গতকাল এই বিষয়েও আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়া হয়। খবর: ইন্ডিয়া নিউজ নেটওয়ার্ক  

বিষয়:

সম্পর্কে গতি আনবে ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ভারত সফর

প্রকাশের সময়: ১০:২৮:০০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৫ জুলাই ২০২৪

দু’দিনের সফরে দিল্লি এসে ভারতের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি দ্রুত বাস্তবায়িত করার লক্ষ্যে বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক সারলেন ব্রিটিশ বিদেশমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি। পাশাপাশি আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা নিয়েও কথা হয়েছে দুই নেতার। বাণিজ্যমন্ত্রী পীযূষ গয়ালের সঙ্গে দেখা করেছেন ল্যামি। তাঁর মন্তব্য, ‘‘একবিংশ শতকে সুপার পাওয়ার হিসেবে উঠে আসছে ভারত। মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি আমাদের সম্পর্ককে আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ভিত।’’

ব্রিটেনের পক্ষ থেকে আগেই জানানো হয়েছিল, বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আলোচনা অন্তিম স্তরে পৌঁছেছে এবং খুব শীঘ্রই চুক্তি সই হবে বলে আশা করা যায়। বাণিজ্য চুক্তির মোট ২৬টি অধ্যায়ের মধ্যে ১৬টিতে ঐকমত্য হয়ে গিয়েছে বলেও জানানো হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বরাবরই যুক্তরাজ্যের সঙ্গে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু এবং সমতাভিত্তিক মুক্ত বাণিজ্য চালু করতে আগ্রহী।

কূটনৈতিক মহলের বক্তব্য, মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি করতে হলে সংশ্লিষ্ট দু’টি দেশকেই আমদানি শুল্ক হয় ছেঁটে ফেলতে হবে, অথবা একেবারে কমিয়ে আনতে হবে, যাতে একে অন্যের বাজারে সহজেই বেশির ভাগ পণ্য প্রবেশ করাতে পারে। স্কচ-হুইস্কির ক্ষেত্রে এই ছাড় পেতে খুবই আগ্রহী ব্রিটেন। কিন্তু ভারত এখনও মনস্থির করে উঠতে পারেনি।

প্রসঙ্গত, বাণিজ্য নিয়ে আলোচনার জন্য ভারতে গেছেন যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি। এই সফরে তিনি ভারতের কয়েক মন্ত্রী ও ব্যবসায়িক নেতার সঙ্গে বৈঠক করেছেন। ভারত ও বৈশ্বিক দক্ষিণের সঙ্গে ব্রিটেনের সম্পর্ক নতুন করে শুরু করার উদ্যোগ হিসেবে দেখা হচ্ছে এই সফরকে।

ল্যামি ভারতকে যুক্তরাজ্যের ‘অপরিহার্য মিত্র’ বলে অভিহিত করেছেন। অর্থনীতিতে সমৃদ্ধি ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব প্রতিরোধে ভারতের সাফল্যের প্রশংসা করেছেন তিনি। ভারত বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি হতে যাচ্ছে। যুক্তরাজ্যের লেবার সরকার এই দেশের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি করার ব্যাপারে বেশ আগ্রহী। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ল্যামির এই সফরের উদ্দেশ্যও এ ধরনের চুক্তি।

মাত্র তিন সপ্তাহ আগে যুক্তরাজ্যে নতুন সরকার গঠন করেছে স্যার কিয়ার স্টারমারের নেতৃত্বাধীন দল লেবার। বিবিসি বলেছে, এই অল্প সময়ের মধ্যেই ভারতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী পাঠানোর মধ্য দিয়ে দেশটিকে যে তারা খুব গুরুত্বের সঙ্গে নিচ্ছে, তা প্রতীয়মান হয়। লেবার যদি প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত করতে চায়, তা হলে ভারতের সঙ্গে আরও বেশি বাণিজ্য করতে হবে।

উল্লেখ্য, ভারতের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি করার জন্য যুক্তরাজ্য প্রায় দুই বছর ধরেই চেষ্টা করছে। ভারত গত মার্চে নরওয়ে, সুইজারল্যান্ড ও আইসল্যান্ডের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি করেছে। এসব দেশ ইউরোপিয়ান ইউনিয়নভুক্ত নয়। এদিকে, এই মাসের শুরুতে ল্যামি তার প্রথম বিদেশ সফরের অংশ হিসেবে ইউরোপ সফর করেছেন। ওই সফরে তিনি বেশ কয়েক ইউরোপীয় নেতার সঙ্গে বৈঠক করেছেন। ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সঙ্গে যুক্তরাজ্যের সম্পর্ক জোরদার করতে তিনি ওই সফর করেন।

তবে তার চলমান ভারত সফর অর্থনীতির চেয়েও বেশি কিছু বলে ধরা হচ্ছে। কারণ বৈশ্বিক দক্ষিণে ভারত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শক্তি। ল্যাম বলেছেন, তিনি এই অঞ্চলের উন্নয়নশীল দেশগুলোর সঙ্গে ব্রিটেনের সম্পর্ক নতুন করে শুরু করতে চান।

এছাড়া, সাতটি বিষয়ে গুরুত্ব আরোপ পূর্বক ভারত-ইউকে প্রযুক্তি নিরাপত্তা উদ্যোগ আরম্ভ হয়েছে। ভারত ও যুক্তরাজ্য উভয় দেশের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টাগণ এই যৌথ প্রযুক্তি নিরাপত্তা উদ্যোগের সমন্বয় করবেন। সেগুলো যথাক্রমে, টেলিকম, খনিজ, সেমিকন্ডাক্টর, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স, কোয়ান্টাম, বায়োটেকনোলজি এবং হেলথটেক; এবং, উন্নত উপকরণ ইত্যাদি। গতকাল এই বিষয়েও আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়া হয়। খবর: ইন্ডিয়া নিউজ নেটওয়ার্ক