ময়মনসিংহ ০৭:৩০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নিজেকে ‘উত্তম মুসলিম’ আর সবাইকে ‘জাহান্নামী’ ভাবলে ক্ষতি কার?

ময়মনসিংহ: নিজেকে অন্যের চেয়ে “ভাল মুসলিম” মনে করা এক ধরনের অহংকার। ধরুন, আমাদের সমাজে কি ট্রেন্ড চলছে? হঠাৎ কেউ দ্বীনের পথে যাত্রারম্ভ করতেই আশেপাশের সবাইকে “কাফির” ভাবা শুরু করা, অন্যের ইবাদত নিয়ে হাসি-তামাশা-ট্রল করা, যেকোনো ইস্যুতেই কাউকে “জাহান্নামী” ট্যাগ দেওয়াটা এখন হরহামেশাই দেখা যাচ্ছে।

বিশেষত আমাদের নয়া প্রজন্ম নতুন নতুন বিশেষ বিশেষ “আমীরের” মুরিদ বা শিষ্য হয়েই অজ্ঞতাবশত নিজের ইবাদত ও নিজের ঈমান নিয়ে ব্যপকভাবে অহঙ্কারী হয়ে উঠছে। তাদের কথায়, কাজে, লেখায়, আচরণে উগ্রতা ও অহঙ্কারের আধিক্য দেখা যায়। মানুষের মৃত্যুতে হা হা রিএক্ট, প্রতিপক্ষের বিপদ বা মৃত্যুতে “আলহামদুলিল্লাহ” লিখে পাশবিক উল্লাস, সামাজিক মাধ্যমের সর্বত্র মোরাল পুলিশিং ভয়ংকরভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।

এসব যে কতটা বিধ্বংসী আচরণ, তা যদি তারা জানত! হায় অভাগা! স্বয়ং নবী-রাসূলগণ (আ) ও তাদের সহযোদ্ধাগণও আল্লাহর কাছ থেকে নিশ্চিত জান্নাতের আশ্বাস পেয়েও “নিরহংকারী” ও “নিঃস্ব” হিসেবে আল্লাহর দরবারে কান্নাকাটি করতেন। অথচ, আমরা সামান্য ধর্মজ্ঞান ও লোকদেখানো ইবাদত করেই অহংকারবশত যাকে-তাকে “জাহান্নামী” ট্যাগ দিয়ে ফেলি!

অথচ, রোজ হাশরের মাঠে একমাত্র হযরত মুহাম্মদ (সা) ব্যতীত সমগ্র মানবজাতি “ইয়া নাফসি”, ” ইয়া নাফসি” বলে দৌড়াবে! আল্লাহ তা’আলার চূড়ান্ত রায় ঘোষিত হবার আগমূহুর্ত পর্যন্ত কেউ জানেন না, কে জান্নাতে যাবে, আর কে জাহান্নামে। কে মু’মিন হিসেবে দুনিয়া থেকে বিদায় নিচ্ছে, আর কে কাফির হিসেবে বিদায় নিচ্ছে, এই রেকর্ড একমাত্র আল্লাহর কাছেই সংরক্ষিত। সারাজীবন ইবাদত করেও অধিকাংশ মানুষ জাহান্নামে যাবে। আবার কেউ সারাজীবন পাপ করেও একটি উসিলায় চলে যাবে জান্নাতে।

যাহোক, অহংকার নিয়ে ইসলাম কি বলে? চলুন জেনে নেওয়া যাক:

অহংকার শয়তানের চরিত্র। এই অহংকার ও হিংসাই ইবলিশকে ফেরেশতাদের শিক্ষক থেকে শয়তানে পরিণত করেছে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘সে (ইবলিশ সম্মানিত আদমকে সিজদার মাধ্যমে সম্মান করতে) অস্বীকার করল এবং অহংকার করল, পরিণতিতে সে কাফিরদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেল।’ (সুরা-২ বাকারা, আয়াত: ৩৪)

হাদিস কুদসিতে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘অহংকার আমার সম্মানের উত্তরীয় আর সম্মান হচ্ছে আমার গৌরবের পোশাক; যে ব্যক্তি এ দুটির কোনো একটি নিয়ে আমার সঙ্গে টানাটানি করে, আমি তাকে আজাবে নিক্ষেপ করি।’ (আবু দাউদ: ৪০৯০)

হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘অহংকার হচ্ছে সত্যকে উপেক্ষা করা এবং মানুষকে অপমান-অসম্মান ও তুচ্ছতাচ্ছিল্য করা।’ (মুসলিম: ৯১)

আবদুল্লাহ ইবনুল মুবারককে প্রশ্ন করা হলো—অহংকার কাকে বলে? তিনি বললেন, মানুষকে হেয় জ্ঞান করা। (সিয়ারু আলামিন নুবালা, খণ্ড: ৮, পৃষ্ঠা: ৪০৭)

কেন মানুষ অহংকার করে? আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘মানুষ অবশ্যই সীমালঙ্ঘন করে, যখন সে নিজেকে অভাবমুক্ত মনে করে।’ (সুরা-৯৬ আলাক, আয়াত: ৬-৭)।

সুতরাং, মহান আল্লাহ্ তা’আলা আমাদের সবাইকে দ্বীনের সহীহ্ বোঝ দান করুক এবং অহঙ্কার থেকে রক্ষা করুক, আমীন।

লেখক: এক আল্লাহর দাস

নিজেকে ‘উত্তম মুসলিম’ আর সবাইকে ‘জাহান্নামী’ ভাবলে ক্ষতি কার?

প্রকাশের সময়: ০৬:১০:১৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ১ এপ্রিল ২০২৪

ময়মনসিংহ: নিজেকে অন্যের চেয়ে “ভাল মুসলিম” মনে করা এক ধরনের অহংকার। ধরুন, আমাদের সমাজে কি ট্রেন্ড চলছে? হঠাৎ কেউ দ্বীনের পথে যাত্রারম্ভ করতেই আশেপাশের সবাইকে “কাফির” ভাবা শুরু করা, অন্যের ইবাদত নিয়ে হাসি-তামাশা-ট্রল করা, যেকোনো ইস্যুতেই কাউকে “জাহান্নামী” ট্যাগ দেওয়াটা এখন হরহামেশাই দেখা যাচ্ছে।

বিশেষত আমাদের নয়া প্রজন্ম নতুন নতুন বিশেষ বিশেষ “আমীরের” মুরিদ বা শিষ্য হয়েই অজ্ঞতাবশত নিজের ইবাদত ও নিজের ঈমান নিয়ে ব্যপকভাবে অহঙ্কারী হয়ে উঠছে। তাদের কথায়, কাজে, লেখায়, আচরণে উগ্রতা ও অহঙ্কারের আধিক্য দেখা যায়। মানুষের মৃত্যুতে হা হা রিএক্ট, প্রতিপক্ষের বিপদ বা মৃত্যুতে “আলহামদুলিল্লাহ” লিখে পাশবিক উল্লাস, সামাজিক মাধ্যমের সর্বত্র মোরাল পুলিশিং ভয়ংকরভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।

এসব যে কতটা বিধ্বংসী আচরণ, তা যদি তারা জানত! হায় অভাগা! স্বয়ং নবী-রাসূলগণ (আ) ও তাদের সহযোদ্ধাগণও আল্লাহর কাছ থেকে নিশ্চিত জান্নাতের আশ্বাস পেয়েও “নিরহংকারী” ও “নিঃস্ব” হিসেবে আল্লাহর দরবারে কান্নাকাটি করতেন। অথচ, আমরা সামান্য ধর্মজ্ঞান ও লোকদেখানো ইবাদত করেই অহংকারবশত যাকে-তাকে “জাহান্নামী” ট্যাগ দিয়ে ফেলি!

অথচ, রোজ হাশরের মাঠে একমাত্র হযরত মুহাম্মদ (সা) ব্যতীত সমগ্র মানবজাতি “ইয়া নাফসি”, ” ইয়া নাফসি” বলে দৌড়াবে! আল্লাহ তা’আলার চূড়ান্ত রায় ঘোষিত হবার আগমূহুর্ত পর্যন্ত কেউ জানেন না, কে জান্নাতে যাবে, আর কে জাহান্নামে। কে মু’মিন হিসেবে দুনিয়া থেকে বিদায় নিচ্ছে, আর কে কাফির হিসেবে বিদায় নিচ্ছে, এই রেকর্ড একমাত্র আল্লাহর কাছেই সংরক্ষিত। সারাজীবন ইবাদত করেও অধিকাংশ মানুষ জাহান্নামে যাবে। আবার কেউ সারাজীবন পাপ করেও একটি উসিলায় চলে যাবে জান্নাতে।

যাহোক, অহংকার নিয়ে ইসলাম কি বলে? চলুন জেনে নেওয়া যাক:

অহংকার শয়তানের চরিত্র। এই অহংকার ও হিংসাই ইবলিশকে ফেরেশতাদের শিক্ষক থেকে শয়তানে পরিণত করেছে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘সে (ইবলিশ সম্মানিত আদমকে সিজদার মাধ্যমে সম্মান করতে) অস্বীকার করল এবং অহংকার করল, পরিণতিতে সে কাফিরদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেল।’ (সুরা-২ বাকারা, আয়াত: ৩৪)

হাদিস কুদসিতে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘অহংকার আমার সম্মানের উত্তরীয় আর সম্মান হচ্ছে আমার গৌরবের পোশাক; যে ব্যক্তি এ দুটির কোনো একটি নিয়ে আমার সঙ্গে টানাটানি করে, আমি তাকে আজাবে নিক্ষেপ করি।’ (আবু দাউদ: ৪০৯০)

হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘অহংকার হচ্ছে সত্যকে উপেক্ষা করা এবং মানুষকে অপমান-অসম্মান ও তুচ্ছতাচ্ছিল্য করা।’ (মুসলিম: ৯১)

আবদুল্লাহ ইবনুল মুবারককে প্রশ্ন করা হলো—অহংকার কাকে বলে? তিনি বললেন, মানুষকে হেয় জ্ঞান করা। (সিয়ারু আলামিন নুবালা, খণ্ড: ৮, পৃষ্ঠা: ৪০৭)

কেন মানুষ অহংকার করে? আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘মানুষ অবশ্যই সীমালঙ্ঘন করে, যখন সে নিজেকে অভাবমুক্ত মনে করে।’ (সুরা-৯৬ আলাক, আয়াত: ৬-৭)।

সুতরাং, মহান আল্লাহ্ তা’আলা আমাদের সবাইকে দ্বীনের সহীহ্ বোঝ দান করুক এবং অহঙ্কার থেকে রক্ষা করুক, আমীন।

লেখক: এক আল্লাহর দাস