ময়মনসিংহ: ময়মনসিংহের ত্রিশালে বাজারদরের চেয়ে চারগুণ বেশি দামে জমি বিক্রির চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে নিজ জমি গভীর খনন করে তিন পরিবারের বসতঘর ঝুঁকিতে ফেলার অভিযোগ উঠেছে এক প্রভাবশালী ব্যক্তির বিরুদ্ধে। ঘটনাটি উপজেলার বালিপাড়া ইউনিয়নের বাহাদুরপুর গ্রামের।
সম্প্রতি ত্রিশাল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর গ্রামের বাছির উদ্দিনের বিরুদ্ধে এ ধরনের একটি অভিযোগ জমা দিয়েছেন একই গ্রামের মোফাজ্জল হোসেনের ছেলে রাকিবুল হাসান। এবিষয়ে ত্রিশাল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বরাবরও একটি অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।
অভিযোগ সূত্রে ও ভুক্তভুগীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, খননকৃত জমির আশেপাশে জমির বাজারদর আড়াই লাখ টাকা থাকলেও বাছির উদ্দিন রাকিবের পরিবারের কাছে ১০ লাখ টাকা কাঠা দাবি করেন। এ দামে জমি না কিনলে গভীর খননের মাধ্যমে রাকিবদের বসতঘর ঝুঁকিতে ফেলারও হুমকি দেয় সে। এতে বাধ্য হয়ে পাকা বসতঘর বাঁচাতে চার লাখ টাকা কাঠা পর্যন্ত দাম দিতে রাজি হলেও জমির মালিক রাজি না হয়ে স্থানীয় একটি ইটভাটায় ১৪ শতাংশ জমি ১২ ফুট গভীর খনন করে মাটি বিক্রি করে দেয়। এতে খননকৃত জমির পাশের তিন পরিবারের বসতঘর ঝুঁকিতে পড়েছে। যেকোনো সময় ধ্বসে পড়তে পারে বসতঘর, ঘটতে পারে প্রাণহানি। ঘর ধ্বসে পড়ার আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন পরিবার গুলো।
ভুক্তভোগী পরিবার গুলো তাদের থাকার ঘর রক্ষা ও জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিতে প্রশাসনের দ্রুত হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
এবিষয়ে জানতে চাইলে অভিযোগ অস্বীকার করে বাছির উদ্দিন বলেন, 'জমির দাম আছে দশ লাখ টাকা কাঠা, তারা দিতে চাই কম। চেয়ারম্যানের ছেলে এবং গ্রামের পাঁচজন মিলে একটা রফাদফা করেছিল। তারা সেটা মানেনি। আমার আগেই এটা খনন করার একটা ইচ্ছা ছিল। আমার জায়গা আমি খনন করেছি। তারাও যদি চার হাত রেখে ঘর করতো তাহলে তো সমস্যা হতো না।'
জমি ক্রয় না করায় আপনি ইচ্ছে মতো খনন করে আরেকজনকে বিপদে ফেলতে পারেন? প্রতিবেদকের এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আমার জমি আমি খনন করেছি। এখন আমি কি করতে পারি আপনিই বলেন।
ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্য রাকিব বলেন, 'আমাদের পড়াশোনার খরচ মিটিয়ে আমার বাবা দীর্ঘদিন বিদেশ করে এই বাড়িটি নির্মাণ করেছেন। এটুকুই আমাদের একমাত্র সম্বল। এখন থাকার এই ঘরটিও যেকোন সময় ধ্বসে পড়তে পারে। বৃষ্টি হলে বিপদ আরও বাড়বে। বসতঘর ধ্বসে পড়ার ভয়ে আমরা তিন পরিবার নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছি। এর আগে বাজারদরের চারগুন জমির দাম দাবি করে বিভিন্ন জনের মাধ্যমে হুমকি দিয়ে বলেছিল বেকু দিয়ে(খনন যান্ত্র) জমি খনন করে ফেলবে। কিন্তু আমাদের তো এতো বেশি দাম দিয়ে কেনার সামর্থ নাই। খনন করার সময় বাঁধা দিলে তাদের ভয়ভীতি ও হুমকি-ধমকির জন্য আর ঘর থেকে বেরই হতে পারিনি। উনি উনার জমি খনন করবে ঠিক আছে কিন্তু উনিকি আমাকে মাইরা উনার জমি খনন করতে পারে, দেশে কি আইন নাই?'
বালিপাড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ বাদল বলেন, 'এই পরিবার গুলোর সাথে যা হচ্ছে তা চরম অন্যায়। বিষয়টি জানতে পেরেই আমি ঘটনাস্থলে গিয়েছি। বাছির কারও কথা শুনছে না। সে জমির দাম বাজারদরের চাইতে অনেক বেশি দাবি করেছিল। সে একটা চরম বদমাইশ। যেকোন সময় বসতঘর ধ্বসে লোকও মারা যেতে পারে। আমি তাকে ডেকে পাঠিয়ে নোটিশ করবো।'
ত্রিশাল উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা(ইউএনও) জুয়েল আহমেদ বলেন, এবিষয়ে আবেদন পেয়েছি। স্থানীয় চেয়ারম্যান ও অভিযুক্ত ব্যাক্তির সাথে তাৎক্ষণিক কথা বলেছি। স্থানীয়ভাবে বিষয়টি সমাধান করতে বলেছি। সমাধনা না হলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সাইফুল আলম তুহিন
ইমেইল: news@pratidinermymensingh.com
©সর্বস্বত্ব ২০১৬-২০২৪ | প্রতিদিনের ময়মনসিংহ