ময়মনসিংহ ০৭:২৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নালিতাবাড়ীতে ভাগনেকে গলাকেটে হত্যা, চেয়ারম্যানসহ গ্রেপ্তার ৬

ছবি: প্রতিদিনের ময়মনসিংহ

ময়মনসিংহ: শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান হবির পরিকল্পনাতে তার ছেলে ও দুই ভাতিজা মিলে বৃহস্পতিবার (২৫ জানুয়ারি) রাতে গলা কেটে হত্যা করেন তারই ভাগনে শাহ কামাল ওরফে কদি মিয়াকে (৩৫)। এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় সাবেক চেয়ারম্যান, তার ছেলে, স্ত্রী, ভাই এবং দুই ভাতিজাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

শনিবার বিকালে থানায় সংবাদ সম্মেলন করে হত্যাকাণ্ডের তথ্য জানান সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (নালিতাবাড়ী সার্কেল) দিদারুল ইসলাম।

সংবাদ সম্মেলন ও সরেজমিনে প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, ২০১৯ সালের ২৫ এপ্রিল জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি হামলা-সংঘর্ষ চলাকালে তৎকালীন ১০নং যোগানিয়া ইউপি চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান হবির অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্রের গুলিতে ঘটনাস্থলেই নিহত হন প্রতিপক্ষের কৃষক ইদ্রিস আলী (৩০)। ‘চাঞ্চল্যকর মামলা’ হিসেবে আমলে নিয়ে তৎকালীন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবুল খায়ের আগ্নেয়াস্ত্র ও হত্যা এ দুই মামলায় পৃথক চার্জশিট দাখিল করেন। দীর্ঘদিন হাজতবাসের পর আসামিরা জামিনে বেরিয়ে আসে।

এদিকে হবি চেয়ারম্যানের গুলিতে নিহত ইদ্রিস আলীর বাবা ফজল মিয়ার সাথে চেয়ারম্যানের ভাগনে দিনমজুর শাহ কামালের ২০১৮ সালে ১১ কাঠা বন্ধকী জমি নিয়ে বিরোধ ও শালিস-বিচার চলছিল। এ বিরোধকে মোক্ষম সুযোগ হিসেবে কাজে লাগাতে ভাগনেকে হত্যা করে প্রতিপক্ষ ফজলকে ফাঁসাতে পরিকল্পনা করেন ইউপি চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান হবি। তার সাথে এ পরিকল্পনায় অংশ নেন তারই সহোদর ভাই হারেজ আলী ও স্ত্রী আমেলা খাতুন ঝর্ণা।

বৃহস্পতিবার রাত আনুমানিক ৮টার দিকে নিজ ঘর থেকে স্থানীয় গড়াকুড়া বাজারের উদ্দেশ্যে বের হন দিনমজুর শাহ কামাল। গড়াকুড়া বাজার থেকে মোস্তফা শাহ কামালকে ডেকে হাবিবুর রহমান হবির পরিত্যক্ত বাড়ির একটি ঘরে পাঠায়। সেখানে আগে থেকেই অবস্থান করা সারোয়ার জাহান শান্ত ও রাহুল শাহ কামালকে চেপে ধরে। মোস্তফা ছুরি দিয়ে গলাকেটে হত্যা করে। পরে ফ্লোরে জমাট বাঁধা রক্ত ধুঁয়ে-মুছে বস্তা ও কম্বল দিয়ে পেঁচিয়ে মরদেহটি মাঝরাতে খালের ধারে ফেলে রাখা হয়। 

এদিকে গভীর রাত পর্যন্ত বাড়ি না ফেরায় স্ত্রী শেফালী স্বজনদের বাড়ি ফোন করে খোঁজ নিয়ে স্বামীর সন্ধান পেতে ব্যর্থ হন। শুক্রবার (২৬ জানুয়ারি) সকাল সাড়ে ৯টার দিকে কুত্তামারা হরে খাল পাড়ের বাসিন্দা রনি মিয়া প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে বের হলে ঝোপের নিচে মরদেহ দেখে তা শাহ কামালের গলাকাটা মরদেহ বলে শনাক্ত করে। পরে ৯৯৯-এ ফোন করলে নালিতাবাড়ী থানা পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে মরদেহ উদ্ধার করে। 

হত্যাকাণ্ডের তদন্তকালে চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান হবির বসতঘর তল্লাশি করে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত রক্তমাখা ছুরি, জামা-কাপড় ও জুতা জব্দ করে পুলিশ। এ সময় পরিকল্পনাকারী হাবিবুর রহমান হবি (৫৫), তার ছেলে সারোয়ার জাহান শান্ত (২৬), তৃতীয় স্ত্রী আমেলা খাতুন ঝর্ণা (৪২), সহোদর ভাই হারেজ আলী (৫৮), ভাতিজা মোস্তফা (৩০) ও রাহুলকে (২২) গ্রেফতার করা হয়। রাতেই হত্যাকাণ্ডের শিকার শাহ কামালের মা অছিরন বেগম বাদী হয়ে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। শনিবার তাদের আদালতে সোপর্দ করা হলে হত্যায় সরাসরি জড়িত তিনজনই আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মনিরুল আলম ভুইয়া, পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) আব্দুল লতিফ মিয়াসহ পুলিশের অন্যান্য সদস্য ও বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

নালিতাবাড়ীতে ভাগনেকে গলাকেটে হত্যা, চেয়ারম্যানসহ গ্রেপ্তার ৬

প্রকাশের সময়: ০১:২০:০০ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৮ জানুয়ারী ২০২৪

ময়মনসিংহ: শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান হবির পরিকল্পনাতে তার ছেলে ও দুই ভাতিজা মিলে বৃহস্পতিবার (২৫ জানুয়ারি) রাতে গলা কেটে হত্যা করেন তারই ভাগনে শাহ কামাল ওরফে কদি মিয়াকে (৩৫)। এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় সাবেক চেয়ারম্যান, তার ছেলে, স্ত্রী, ভাই এবং দুই ভাতিজাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

শনিবার বিকালে থানায় সংবাদ সম্মেলন করে হত্যাকাণ্ডের তথ্য জানান সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (নালিতাবাড়ী সার্কেল) দিদারুল ইসলাম।

সংবাদ সম্মেলন ও সরেজমিনে প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, ২০১৯ সালের ২৫ এপ্রিল জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি হামলা-সংঘর্ষ চলাকালে তৎকালীন ১০নং যোগানিয়া ইউপি চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান হবির অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্রের গুলিতে ঘটনাস্থলেই নিহত হন প্রতিপক্ষের কৃষক ইদ্রিস আলী (৩০)। ‘চাঞ্চল্যকর মামলা’ হিসেবে আমলে নিয়ে তৎকালীন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবুল খায়ের আগ্নেয়াস্ত্র ও হত্যা এ দুই মামলায় পৃথক চার্জশিট দাখিল করেন। দীর্ঘদিন হাজতবাসের পর আসামিরা জামিনে বেরিয়ে আসে।

এদিকে হবি চেয়ারম্যানের গুলিতে নিহত ইদ্রিস আলীর বাবা ফজল মিয়ার সাথে চেয়ারম্যানের ভাগনে দিনমজুর শাহ কামালের ২০১৮ সালে ১১ কাঠা বন্ধকী জমি নিয়ে বিরোধ ও শালিস-বিচার চলছিল। এ বিরোধকে মোক্ষম সুযোগ হিসেবে কাজে লাগাতে ভাগনেকে হত্যা করে প্রতিপক্ষ ফজলকে ফাঁসাতে পরিকল্পনা করেন ইউপি চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান হবি। তার সাথে এ পরিকল্পনায় অংশ নেন তারই সহোদর ভাই হারেজ আলী ও স্ত্রী আমেলা খাতুন ঝর্ণা।

বৃহস্পতিবার রাত আনুমানিক ৮টার দিকে নিজ ঘর থেকে স্থানীয় গড়াকুড়া বাজারের উদ্দেশ্যে বের হন দিনমজুর শাহ কামাল। গড়াকুড়া বাজার থেকে মোস্তফা শাহ কামালকে ডেকে হাবিবুর রহমান হবির পরিত্যক্ত বাড়ির একটি ঘরে পাঠায়। সেখানে আগে থেকেই অবস্থান করা সারোয়ার জাহান শান্ত ও রাহুল শাহ কামালকে চেপে ধরে। মোস্তফা ছুরি দিয়ে গলাকেটে হত্যা করে। পরে ফ্লোরে জমাট বাঁধা রক্ত ধুঁয়ে-মুছে বস্তা ও কম্বল দিয়ে পেঁচিয়ে মরদেহটি মাঝরাতে খালের ধারে ফেলে রাখা হয়। 

এদিকে গভীর রাত পর্যন্ত বাড়ি না ফেরায় স্ত্রী শেফালী স্বজনদের বাড়ি ফোন করে খোঁজ নিয়ে স্বামীর সন্ধান পেতে ব্যর্থ হন। শুক্রবার (২৬ জানুয়ারি) সকাল সাড়ে ৯টার দিকে কুত্তামারা হরে খাল পাড়ের বাসিন্দা রনি মিয়া প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে বের হলে ঝোপের নিচে মরদেহ দেখে তা শাহ কামালের গলাকাটা মরদেহ বলে শনাক্ত করে। পরে ৯৯৯-এ ফোন করলে নালিতাবাড়ী থানা পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে মরদেহ উদ্ধার করে। 

হত্যাকাণ্ডের তদন্তকালে চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান হবির বসতঘর তল্লাশি করে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত রক্তমাখা ছুরি, জামা-কাপড় ও জুতা জব্দ করে পুলিশ। এ সময় পরিকল্পনাকারী হাবিবুর রহমান হবি (৫৫), তার ছেলে সারোয়ার জাহান শান্ত (২৬), তৃতীয় স্ত্রী আমেলা খাতুন ঝর্ণা (৪২), সহোদর ভাই হারেজ আলী (৫৮), ভাতিজা মোস্তফা (৩০) ও রাহুলকে (২২) গ্রেফতার করা হয়। রাতেই হত্যাকাণ্ডের শিকার শাহ কামালের মা অছিরন বেগম বাদী হয়ে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। শনিবার তাদের আদালতে সোপর্দ করা হলে হত্যায় সরাসরি জড়িত তিনজনই আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মনিরুল আলম ভুইয়া, পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) আব্দুল লতিফ মিয়াসহ পুলিশের অন্যান্য সদস্য ও বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।