ময়মনসিংহ ০৭:৪৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শেরপুরে ‘লেট ব্লাইট’ নিয়ে আলু চাষিদের দুশ্চিন্তা

ছবি: প্রতিদিনের ময়মনসিংহ

ময়মনসিংহ: শেরপুরে ক্ষেতের আলুতে ‘লেট ব্লাইট’ রোগ নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন চাষিরা। ক্ষেত থেকে আলু তোলার শেষ সময়ে বৈরী আবহাওয়ার কারণে দেখা দিয়েছে এ রোগ। সার কীটনাশকের চড়া দামের সঙ্গে এ রোগ দমনে স্প্রে কিনতে বাড়তি খরচ যেন মরার ওপর খাঁড়ার ঘা হয়ে দাঁড়িয়েছে চাষিদের মাঝে।

এদিকে মাঠ পর্যায়ে রোগ প্রতিকারে কৃষকদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছে কৃষি বিভাগ।

শেরপুর সদর উপজেলার লছমনপুর এলাকার চাষি মোজাম্মেল হক এবার এক একর জমিতে আলুর আবাদ করেছিলেন। ভারী কুয়াশা ও বাড়তি ঠান্ডায় শেষ সময়ে ‘লেট ব্লাইটে’ আক্রান্ত হয়ে ৪০ হাজার টাকা লোকসান হয়েছে তার।

এসব বিষয় নিয়ে তিনি বলেন, আমার প্রতি কাঠায় ৫ হাজার টাকা করে খরচ হয়েছে। কিন্তু এখন উঠছে মাত্র ৩ হাজার টাকা করে। সে হিসাবে একরে ৪০ হাজার টাকা করে লস হচ্ছে।

শুধু মোজাম্মেল হকই নন, গেলো মৌসুমে ভালো দাম পাওয়ায় এবারও অধিক লাভের আশায় আলু চাষে নেমেছিলেন শেরপুরের চাষিরা।

জেলা কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, জেলায় এবার ৫ হাজার ২১১ হেক্টর জমিতে আলু আবাদ হয়েছে। কিন্তু চলতি মৌসুমে আলুক্ষেতে লেট ব্লাইট রোগের প্রাদুর্ভাবে দিশাহারা স্থানীয় চাষিরা।

রৌহা এলাকার আলুচাষি কবির মিয়া বলেন, ঘন কুয়াশার কারণে এবার আলু খুব ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দোকান থেকে নিয়মিত কীটনাশক এনে স্প্রে করেও কোনো লাভ হচ্ছে না।

নকলা উপজেলার চন্দ্রকোণা এলাকার রাজন শেখ বলেন, কীটনাশক কোনটা ব্যবহার করবো, সেটার কোনো সমাধানই পাচ্ছি না। একেতো কীটনাশকের দাম বেশি, আরেক দিকে একদিন পর পর কীটনাশক দিয়ে উল্টো আলু গাছের ক্ষতি হচ্ছে, পুড়ে যাচ্ছে। এবার খুব ক্ষতির মধ্যে আছি।

কৃষকরা বলছেন, আলু রোপণের দেড় থেকে দুই মাসের মাথায় গাছের কাণ্ড ও পাতা এই রোগে আক্রান্ত হয়ে গাছ মরে যাচ্ছে। বার বার ছত্রাকনাশক প্রয়োগ করেও আলুর গাছ বাঁচানো যাচ্ছে না। এতে হতাশ হতে হচ্ছে। এবার আলু উৎপাদন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা বাড়ছে।

নকলা উপজেলার ইদ্রিস মিয়া বলেন, শুধু গোল আলুই না, বীজ আলুও ‘লেট ব্লাইটে’ আক্রান্ত হয়েছে। এবার বীজ আলু নিয়েও বিপাকে পড়তে হবে স্থানীয় চাষিদের।

আরেক চাষি লতিফ মিয়া বলেন, যারা বিএডিসির চুক্তিভিত্তিক চাষি, তারাও এবার চরম ভোগান্তির মধ্যে পড়বে। তাদের খরচ তোলা নিয়েও শঙ্কা আছে।

এদিকে গত মৌসুমে আলুতে লাভ বেশি পেয়ে অনেকেই এবার ধারদেনা ও ব্যাংক ঋণ করে আলুচাষ করেছিলেন। কিন্তু এ রোগের আক্রমণে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারাও মাঠ পর্যায়ে খোঁজ নিচ্ছেন না বলে অভিযোগ তাদের।

আজগর আলী বলেন, সময়মতো কৃষি বিভাগের কর্মকর্তাদের পরামর্শ পাওয়া যাচ্ছে না। তবে মাঠকর্মীদের পরামর্শ অনুযায়ী কীটনাশক এনে প্রয়োগ করলেও, তেমন কাজে আসছে না।

তবে কৃষি বিভাগ বলছে, তীব্র শীত ও কুয়াশার কারণে এ রোগের সংক্রমণ দেখা দিয়েছে। এ থেকে উত্তরণে কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

শেরপুরের খামারবাড়ীর উপপরিচালক ড. সুকল্প দাস বলেন, আমাদের কর্মকর্তারা কৃষকদের নিয়মিত পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন। বৈরী আবহাওয়া কেটে গেলে এ রোগের সমস্যা থাকবে না।

শেরপুরে ‘লেট ব্লাইট’ নিয়ে আলু চাষিদের দুশ্চিন্তা

প্রকাশের সময়: ০৭:০৮:০০ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৭ জানুয়ারী ২০২৪

ময়মনসিংহ: শেরপুরে ক্ষেতের আলুতে ‘লেট ব্লাইট’ রোগ নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন চাষিরা। ক্ষেত থেকে আলু তোলার শেষ সময়ে বৈরী আবহাওয়ার কারণে দেখা দিয়েছে এ রোগ। সার কীটনাশকের চড়া দামের সঙ্গে এ রোগ দমনে স্প্রে কিনতে বাড়তি খরচ যেন মরার ওপর খাঁড়ার ঘা হয়ে দাঁড়িয়েছে চাষিদের মাঝে।

এদিকে মাঠ পর্যায়ে রোগ প্রতিকারে কৃষকদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছে কৃষি বিভাগ।

শেরপুর সদর উপজেলার লছমনপুর এলাকার চাষি মোজাম্মেল হক এবার এক একর জমিতে আলুর আবাদ করেছিলেন। ভারী কুয়াশা ও বাড়তি ঠান্ডায় শেষ সময়ে ‘লেট ব্লাইটে’ আক্রান্ত হয়ে ৪০ হাজার টাকা লোকসান হয়েছে তার।

এসব বিষয় নিয়ে তিনি বলেন, আমার প্রতি কাঠায় ৫ হাজার টাকা করে খরচ হয়েছে। কিন্তু এখন উঠছে মাত্র ৩ হাজার টাকা করে। সে হিসাবে একরে ৪০ হাজার টাকা করে লস হচ্ছে।

শুধু মোজাম্মেল হকই নন, গেলো মৌসুমে ভালো দাম পাওয়ায় এবারও অধিক লাভের আশায় আলু চাষে নেমেছিলেন শেরপুরের চাষিরা।

জেলা কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, জেলায় এবার ৫ হাজার ২১১ হেক্টর জমিতে আলু আবাদ হয়েছে। কিন্তু চলতি মৌসুমে আলুক্ষেতে লেট ব্লাইট রোগের প্রাদুর্ভাবে দিশাহারা স্থানীয় চাষিরা।

রৌহা এলাকার আলুচাষি কবির মিয়া বলেন, ঘন কুয়াশার কারণে এবার আলু খুব ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দোকান থেকে নিয়মিত কীটনাশক এনে স্প্রে করেও কোনো লাভ হচ্ছে না।

নকলা উপজেলার চন্দ্রকোণা এলাকার রাজন শেখ বলেন, কীটনাশক কোনটা ব্যবহার করবো, সেটার কোনো সমাধানই পাচ্ছি না। একেতো কীটনাশকের দাম বেশি, আরেক দিকে একদিন পর পর কীটনাশক দিয়ে উল্টো আলু গাছের ক্ষতি হচ্ছে, পুড়ে যাচ্ছে। এবার খুব ক্ষতির মধ্যে আছি।

কৃষকরা বলছেন, আলু রোপণের দেড় থেকে দুই মাসের মাথায় গাছের কাণ্ড ও পাতা এই রোগে আক্রান্ত হয়ে গাছ মরে যাচ্ছে। বার বার ছত্রাকনাশক প্রয়োগ করেও আলুর গাছ বাঁচানো যাচ্ছে না। এতে হতাশ হতে হচ্ছে। এবার আলু উৎপাদন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা বাড়ছে।

নকলা উপজেলার ইদ্রিস মিয়া বলেন, শুধু গোল আলুই না, বীজ আলুও ‘লেট ব্লাইটে’ আক্রান্ত হয়েছে। এবার বীজ আলু নিয়েও বিপাকে পড়তে হবে স্থানীয় চাষিদের।

আরেক চাষি লতিফ মিয়া বলেন, যারা বিএডিসির চুক্তিভিত্তিক চাষি, তারাও এবার চরম ভোগান্তির মধ্যে পড়বে। তাদের খরচ তোলা নিয়েও শঙ্কা আছে।

এদিকে গত মৌসুমে আলুতে লাভ বেশি পেয়ে অনেকেই এবার ধারদেনা ও ব্যাংক ঋণ করে আলুচাষ করেছিলেন। কিন্তু এ রোগের আক্রমণে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারাও মাঠ পর্যায়ে খোঁজ নিচ্ছেন না বলে অভিযোগ তাদের।

আজগর আলী বলেন, সময়মতো কৃষি বিভাগের কর্মকর্তাদের পরামর্শ পাওয়া যাচ্ছে না। তবে মাঠকর্মীদের পরামর্শ অনুযায়ী কীটনাশক এনে প্রয়োগ করলেও, তেমন কাজে আসছে না।

তবে কৃষি বিভাগ বলছে, তীব্র শীত ও কুয়াশার কারণে এ রোগের সংক্রমণ দেখা দিয়েছে। এ থেকে উত্তরণে কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

শেরপুরের খামারবাড়ীর উপপরিচালক ড. সুকল্প দাস বলেন, আমাদের কর্মকর্তারা কৃষকদের নিয়মিত পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন। বৈরী আবহাওয়া কেটে গেলে এ রোগের সমস্যা থাকবে না।