ময়মনসিংহ ০৭:৪০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সুতার দাম বৃদ্ধি ও অভিজ্ঞ কারিগরের অভাব

শেরপুরে বিলুপ্তির পথে বাহারি রঙের আদিবাসী পোশাক

ফাইল ছবি

ময়মনসিংহ: শেরপুরে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী (আদিবাসী) সম্প্রদায়ের হাতে তৈরি ঐতিহ্যবাহী বাহারি রঙের পোশাক আজ প্রায় বিলুপ্তির পথে।

সুতার দাম বৃদ্ধি, অভিজ্ঞ কারিগরের অভাব ও অর্থনৈতিক দৈন্যতার কারণে আদিবাসীদের হাতে তৈরি বাহারি রঙের পোশাকগুলো হারিয়ে যাওয়ার মূল কারণ বলে জানা গেছে। এসব পোষাকগুলো এখন আর আগের মতো চোখে পড়ে না।

জানা যায়, গারো পাহাড়ের পাদদেশে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের সীমান্ত ঘেঁষে অবস্থিত শেরপুর জেলা। এ জেলার সীমান্তের তিনটি উপজেলার প্রায় ৪০ কিলোমিটার পাহাড়ি এলাকা জুড়ে রয়েছে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সম্প্রদায়ের বসবাস।

আদিবাসী সংগঠন ট্রাইবাল ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন সূত্রে জানা গেছে, নালিতাবাড়ি, ঝিনাইগাতী ও শ্রীবরদী উপজেলায় ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী গারো, হাজং, কোচ, বানাই, বর্মনসহ বিভিন্ন জাতি-গোত্রের প্রায় ৪০ হাজার আদিবাসী সম্প্রদায়ের লোকদের বসবাস।

রাংটিয়া আদিবাসী নেতা যুগল কিশোর কোচ ও বাঁকাকুরা গ্রামের ধীমানচন্দ্র কোচ জানান, একসময় এদের ছিল জমিজমা, গোয়াল ভরা গরুসহ ফসলাদিতে ভরপুর। কিন্তু কালের আবর্তে সবকিছু হারিয়ে আদিবাসী সম্প্রদায়ের লোকজন এখন ভূমিহীনে পরিণত হয়েছে।

তারা বলেন, অতীতে আদিবাসী সম্প্রদায়ের লোকেরা নিজের হাতে তৈরি বাহারি রংয়ের ঐতিহ্যবাহী পোশাক তৈরি করে ব্যবহার করতেন। প্রায় সব আদিবাসী নারীদের পরনে দেখা যেতো তাদের হাতে তৈরি বাহারি রঙের পোশাক।

কোচ সম্প্রদায়ের নিজ হাতে তৈরি বাহারি রঙের পোষাকের মধ্যে রয়েছে লেফেন, বাশেক, উর্না। গারো সম্প্রদায়ের নিজ হাতে তৈরি পোষাকের মধ্যে রয়েছে দকমান্দা, দকশারী, উর্না। তবে হাজং ও বানাই সম্প্রদায়ের লোকজন কোচ সম্প্রদায়ের পোষাকই নিজ হাতে তৈরি করে পরিধান করে থাকতো। কিন্তু এখন আর আদিবাসী নারীদের পরনে আগের মতো বাহারি রঙের পোশাক চোখে পড়ে না।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, আদিবাসীদের অর্থনৈতিক দৈন্যতা, অভিজ্ঞ কারিগরের অভাব ও সুতার দাম বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে আদিবাসী সম্প্রদায়ের লোকদের নিজ হাতে তৈরি পোষাকগুলো দিনে দিনে প্রায় বিলুপ্তির পথে।

উপজেলা হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভানেত্রী মিঃ রবেতা বলেন, আদিবাসীদের অর্থনৈতিক সংকট, সুতার দাম বৃদ্ধি, সরঞ্জামাদির অভাবসহ বস্ত্র তৈরিতে পারদর্শী কারিগরের অভাবে আদিবাসী সম্প্রদায়ের লোকজন আগের মতো আর নিজ হাতে পোশাক তৈরি করতে পারছে না।

ঝিনাইগাতী উপজেলা ট্রাইবাল ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান নাবেশ খকশী বলেন, অতীতে সবাই কাপড় তৈরিতে অভ্যস্ত ছিল। তারা মারা যাওয়ার পর নতুন প্রজন্মের লোকজন এসব বাহারি রঙের পোষাক তৈরি করতে না পারার কারণে দিনে দিনে আদিবাসী সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী হাতে তৈরি বাহারি রঙের পোশাকগুলো আজ প্রায় বিলুপ্তির পথে।

শ্রীবরদী উপজেলা ট্রাইবাল ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান প্রাঞ্জল এম সাংমা বলেন, সব প্রতিকূলতার মাঝেও ১০ শতাংশ আদিবাসী সম্প্রদায়ের লোকেরা এখনও তা ধরে রেখেছে। আদিবাসী সম্প্রদায়ের লোকদের বিয়ে-শাদীতে এখনো চোখে পড়ে এসব বাহারি রঙের পোশাক।

রাংটিয়া গ্রামের আদিবাসী নেতা জাগেন্দ্র কোচ বলেন, সরকারিভাবে অর্থনৈতিক যোগান পাওয়া গেলে আবারো আদিবাসী সম্প্রদায়ের লোকেরা নিজ হাতে বাহারি রঙের পোশাক তৈরিতে আগ্রহ বাড়বে।

সুতার দাম বৃদ্ধি ও অভিজ্ঞ কারিগরের অভাব

শেরপুরে বিলুপ্তির পথে বাহারি রঙের আদিবাসী পোশাক

প্রকাশের সময়: ১২:০০:০০ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২২ জানুয়ারী ২০২৪

ময়মনসিংহ: শেরপুরে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী (আদিবাসী) সম্প্রদায়ের হাতে তৈরি ঐতিহ্যবাহী বাহারি রঙের পোশাক আজ প্রায় বিলুপ্তির পথে।

সুতার দাম বৃদ্ধি, অভিজ্ঞ কারিগরের অভাব ও অর্থনৈতিক দৈন্যতার কারণে আদিবাসীদের হাতে তৈরি বাহারি রঙের পোশাকগুলো হারিয়ে যাওয়ার মূল কারণ বলে জানা গেছে। এসব পোষাকগুলো এখন আর আগের মতো চোখে পড়ে না।

জানা যায়, গারো পাহাড়ের পাদদেশে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের সীমান্ত ঘেঁষে অবস্থিত শেরপুর জেলা। এ জেলার সীমান্তের তিনটি উপজেলার প্রায় ৪০ কিলোমিটার পাহাড়ি এলাকা জুড়ে রয়েছে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সম্প্রদায়ের বসবাস।

আদিবাসী সংগঠন ট্রাইবাল ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন সূত্রে জানা গেছে, নালিতাবাড়ি, ঝিনাইগাতী ও শ্রীবরদী উপজেলায় ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী গারো, হাজং, কোচ, বানাই, বর্মনসহ বিভিন্ন জাতি-গোত্রের প্রায় ৪০ হাজার আদিবাসী সম্প্রদায়ের লোকদের বসবাস।

রাংটিয়া আদিবাসী নেতা যুগল কিশোর কোচ ও বাঁকাকুরা গ্রামের ধীমানচন্দ্র কোচ জানান, একসময় এদের ছিল জমিজমা, গোয়াল ভরা গরুসহ ফসলাদিতে ভরপুর। কিন্তু কালের আবর্তে সবকিছু হারিয়ে আদিবাসী সম্প্রদায়ের লোকজন এখন ভূমিহীনে পরিণত হয়েছে।

তারা বলেন, অতীতে আদিবাসী সম্প্রদায়ের লোকেরা নিজের হাতে তৈরি বাহারি রংয়ের ঐতিহ্যবাহী পোশাক তৈরি করে ব্যবহার করতেন। প্রায় সব আদিবাসী নারীদের পরনে দেখা যেতো তাদের হাতে তৈরি বাহারি রঙের পোশাক।

কোচ সম্প্রদায়ের নিজ হাতে তৈরি বাহারি রঙের পোষাকের মধ্যে রয়েছে লেফেন, বাশেক, উর্না। গারো সম্প্রদায়ের নিজ হাতে তৈরি পোষাকের মধ্যে রয়েছে দকমান্দা, দকশারী, উর্না। তবে হাজং ও বানাই সম্প্রদায়ের লোকজন কোচ সম্প্রদায়ের পোষাকই নিজ হাতে তৈরি করে পরিধান করে থাকতো। কিন্তু এখন আর আদিবাসী নারীদের পরনে আগের মতো বাহারি রঙের পোশাক চোখে পড়ে না।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, আদিবাসীদের অর্থনৈতিক দৈন্যতা, অভিজ্ঞ কারিগরের অভাব ও সুতার দাম বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে আদিবাসী সম্প্রদায়ের লোকদের নিজ হাতে তৈরি পোষাকগুলো দিনে দিনে প্রায় বিলুপ্তির পথে।

উপজেলা হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভানেত্রী মিঃ রবেতা বলেন, আদিবাসীদের অর্থনৈতিক সংকট, সুতার দাম বৃদ্ধি, সরঞ্জামাদির অভাবসহ বস্ত্র তৈরিতে পারদর্শী কারিগরের অভাবে আদিবাসী সম্প্রদায়ের লোকজন আগের মতো আর নিজ হাতে পোশাক তৈরি করতে পারছে না।

ঝিনাইগাতী উপজেলা ট্রাইবাল ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান নাবেশ খকশী বলেন, অতীতে সবাই কাপড় তৈরিতে অভ্যস্ত ছিল। তারা মারা যাওয়ার পর নতুন প্রজন্মের লোকজন এসব বাহারি রঙের পোষাক তৈরি করতে না পারার কারণে দিনে দিনে আদিবাসী সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী হাতে তৈরি বাহারি রঙের পোশাকগুলো আজ প্রায় বিলুপ্তির পথে।

শ্রীবরদী উপজেলা ট্রাইবাল ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান প্রাঞ্জল এম সাংমা বলেন, সব প্রতিকূলতার মাঝেও ১০ শতাংশ আদিবাসী সম্প্রদায়ের লোকেরা এখনও তা ধরে রেখেছে। আদিবাসী সম্প্রদায়ের লোকদের বিয়ে-শাদীতে এখনো চোখে পড়ে এসব বাহারি রঙের পোশাক।

রাংটিয়া গ্রামের আদিবাসী নেতা জাগেন্দ্র কোচ বলেন, সরকারিভাবে অর্থনৈতিক যোগান পাওয়া গেলে আবারো আদিবাসী সম্প্রদায়ের লোকেরা নিজ হাতে বাহারি রঙের পোশাক তৈরিতে আগ্রহ বাড়বে।