ময়মনসিংহ ১১:৪২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বসতভিটা ও ফসলি জমির ব্যপক ক্ষয়ক্ষতি

অকাল নদীভাঙনে বিপাকে দেওয়ানগঞ্জ ও বকশীগঞ্জের মানুষ

ছবি: প্রতিদিনের ময়মনসিংহ

ময়মনসিংহ: জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার চর আমখাওয়া ইউনিয়নের পাটাধোয়াপাড়া থেকে মৌলভীর চর পর্যন্ত দুই কিলোমিটার এলাকায় ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙন অব্যাহত।

অসময়ের এই ভাঙনে হুমকির মুখে পড়েছে কোটি টাকার রাজস্ব আদায়ের সানন্দবাড়ি বাজার, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসহ আশপাশের কয়েকটি গ্রামের মানুষের বসতভিটা-ফসলি জমি।

অপরদিকে জেলার বকশীগঞ্জ উপজেলায় দশানী নদীর ভাঙনে মেরুরচর ইউনিয়নের মাদারেরচর, ডাকপাড়া, চর আইরমারী, মদনেরচরসহ কয়েকটি গ্রামে তিন শতাধিক মানুষ নদী ভাঙনের শিকার হয়েছেন।

অনেকেই সরে গেছেন নিরাপদ স্থানে। অসময়ে নদী ভাঙনের বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের কথা জানিয়েছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায় দেওয়ানগঞ্জের সানন্দবাড়ি বাজারের পশ্চিমপাশে পাটাধোয়াপাড়া থেকে মৌলভীরচর এলাকার মণ্ডলপাড়া, মৌলভীরচর, মুন্সিপাড়া, চুনালীপাড়া, চিথুলীয়া, বাহির পশ্চিমপাড়া, পশ্চিম পাটাধোয়াপাড়া ও খোলাবাড়িসহ কয়েকটি এলাকা নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত দুই মাসে পাঁচ শতাধিক বসতভিটা, দুইশ’ একর ফসলি জমি, পাটাধোয়াপাড়া জামে মসজিদ ও পাটাধোয়াপাড়া নুরানি হাফিজিয়া মাদ্রাসা নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে।

এ ভাঙন অব্যাহত থাকলে কোটি টাকা রাজস্ব আদায়ের সানন্দবাড়ি বাজার, সানন্দবাড়ি ডিগ্রি কলেজ, সানন্দবাড়ি উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্র, সানন্দবাড়ি পুলিশ তদন্ত কেন্দ্র, মৌলভীরচর উচ্চ বিদ্যালয়, মৌলভীরচর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, মৌলভীরচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মৌলভীরচর আলিম মাদ্রাসা, সানারচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, সানন্দবাড়ি পশ্চিমপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, খোলাবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ  মণ্ডলপাড়া, মৌলভীরচর এলাকা ভাঙনে বিলীন হওয়ার আশঙ্কায় রয়েছে।

চর আমখাওয়া ইউনিয়নের পশ্চিম পাটাধোয়াপাড়া এলাকার আফছর আলী (৭৬) জানান, তারা চৌদ্দ বছর আগে বসতভিটা হারিয়েছেন। সেই পুরনো বসতভিটার স্মৃতি এখনো তিনি ভুলতে পারেননি। এ পর্যন্ত ২০ বার ভাঙনের শিকার হয়েছেন তারা। বসতভিটা-ফসলি জমি সব এই নদীর পেটে চলে গেছে। এখন সব হারিয়ে তিনি নিঃস্ব। প্রায় চৌদ্দ বছর আগে সরকারি সড়কে আশ্রয় নিয়েছেন তিনি। দুই মাসের ভাঙনে সেটাও খুব কাছে চলে আসছে। সানন্দবাড়ি বাজার বণিক সমিতির সভাপতি গাজিউর রহমান বলেন, নদী ভাঙনে অনেক বসতভিটা ও আবাদি জমি বিলীন হয়েছে।

দক্ষিণ-পশ্চিমে বালুর চর জেগে ওঠায় পানির স্রোতে পূর্বপাড়ে ভাঙন দেখা দিয়েছে। এ ভাঙনে কোটি টাকার রাজস্ব আদায়ের সানন্দবাড়ি বাজার সম্পূর্ণ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে।

চর আমখাওয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জিয়াউল ইসলাম বলেন, অসময়ে নদীতে তীব্র স্রোত আমি কখনো দেখিনি। তীব্র স্রোতে পূর্বপাড়ে ভাঙন শুরু হয়েছে। অসময়ের ভাঙন রোধ না করতে পারলে সানন্দবাড়ি বাজার বিলীন হয়ে যাবে।

তাই এই ভাঙন রোধে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাছে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানান তিনি।

অপরদিকে বকশীগঞ্জ উপজেলার মেরুরচর ইউনিয়নের মাদারেরচর, ডাকপাড়া, চর আইরমারী, মদনেরচরসহ কয়েকটি গ্রামের তিন শতাধিক মানুষ নদী ভাঙনের শিকার হয়েছেন।

জামালপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম বলেন, অসময়ে দেওয়ানগঞ্জে ব্রহ্মপুত্র ও বকশীগঞ্জে দশানী নদীতে তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভাঙন প্রতিরোধের জন্য জরুরি ভিত্তিতে আমাদের প্রধান কার্যালয়ে প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। সেটা অনুমোদন  পেলে ওই অঞ্চলের ভাঙন প্রতিরোধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বসতভিটা ও ফসলি জমির ব্যপক ক্ষয়ক্ষতি

অকাল নদীভাঙনে বিপাকে দেওয়ানগঞ্জ ও বকশীগঞ্জের মানুষ

প্রকাশের সময়: ০১:২১:১৯ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৬ জানুয়ারী ২০২৪

ময়মনসিংহ: জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার চর আমখাওয়া ইউনিয়নের পাটাধোয়াপাড়া থেকে মৌলভীর চর পর্যন্ত দুই কিলোমিটার এলাকায় ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙন অব্যাহত।

অসময়ের এই ভাঙনে হুমকির মুখে পড়েছে কোটি টাকার রাজস্ব আদায়ের সানন্দবাড়ি বাজার, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসহ আশপাশের কয়েকটি গ্রামের মানুষের বসতভিটা-ফসলি জমি।

অপরদিকে জেলার বকশীগঞ্জ উপজেলায় দশানী নদীর ভাঙনে মেরুরচর ইউনিয়নের মাদারেরচর, ডাকপাড়া, চর আইরমারী, মদনেরচরসহ কয়েকটি গ্রামে তিন শতাধিক মানুষ নদী ভাঙনের শিকার হয়েছেন।

অনেকেই সরে গেছেন নিরাপদ স্থানে। অসময়ে নদী ভাঙনের বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের কথা জানিয়েছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায় দেওয়ানগঞ্জের সানন্দবাড়ি বাজারের পশ্চিমপাশে পাটাধোয়াপাড়া থেকে মৌলভীরচর এলাকার মণ্ডলপাড়া, মৌলভীরচর, মুন্সিপাড়া, চুনালীপাড়া, চিথুলীয়া, বাহির পশ্চিমপাড়া, পশ্চিম পাটাধোয়াপাড়া ও খোলাবাড়িসহ কয়েকটি এলাকা নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত দুই মাসে পাঁচ শতাধিক বসতভিটা, দুইশ’ একর ফসলি জমি, পাটাধোয়াপাড়া জামে মসজিদ ও পাটাধোয়াপাড়া নুরানি হাফিজিয়া মাদ্রাসা নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে।

এ ভাঙন অব্যাহত থাকলে কোটি টাকা রাজস্ব আদায়ের সানন্দবাড়ি বাজার, সানন্দবাড়ি ডিগ্রি কলেজ, সানন্দবাড়ি উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্র, সানন্দবাড়ি পুলিশ তদন্ত কেন্দ্র, মৌলভীরচর উচ্চ বিদ্যালয়, মৌলভীরচর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, মৌলভীরচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মৌলভীরচর আলিম মাদ্রাসা, সানারচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, সানন্দবাড়ি পশ্চিমপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, খোলাবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ  মণ্ডলপাড়া, মৌলভীরচর এলাকা ভাঙনে বিলীন হওয়ার আশঙ্কায় রয়েছে।

চর আমখাওয়া ইউনিয়নের পশ্চিম পাটাধোয়াপাড়া এলাকার আফছর আলী (৭৬) জানান, তারা চৌদ্দ বছর আগে বসতভিটা হারিয়েছেন। সেই পুরনো বসতভিটার স্মৃতি এখনো তিনি ভুলতে পারেননি। এ পর্যন্ত ২০ বার ভাঙনের শিকার হয়েছেন তারা। বসতভিটা-ফসলি জমি সব এই নদীর পেটে চলে গেছে। এখন সব হারিয়ে তিনি নিঃস্ব। প্রায় চৌদ্দ বছর আগে সরকারি সড়কে আশ্রয় নিয়েছেন তিনি। দুই মাসের ভাঙনে সেটাও খুব কাছে চলে আসছে। সানন্দবাড়ি বাজার বণিক সমিতির সভাপতি গাজিউর রহমান বলেন, নদী ভাঙনে অনেক বসতভিটা ও আবাদি জমি বিলীন হয়েছে।

দক্ষিণ-পশ্চিমে বালুর চর জেগে ওঠায় পানির স্রোতে পূর্বপাড়ে ভাঙন দেখা দিয়েছে। এ ভাঙনে কোটি টাকার রাজস্ব আদায়ের সানন্দবাড়ি বাজার সম্পূর্ণ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে।

চর আমখাওয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জিয়াউল ইসলাম বলেন, অসময়ে নদীতে তীব্র স্রোত আমি কখনো দেখিনি। তীব্র স্রোতে পূর্বপাড়ে ভাঙন শুরু হয়েছে। অসময়ের ভাঙন রোধ না করতে পারলে সানন্দবাড়ি বাজার বিলীন হয়ে যাবে।

তাই এই ভাঙন রোধে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাছে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানান তিনি।

অপরদিকে বকশীগঞ্জ উপজেলার মেরুরচর ইউনিয়নের মাদারেরচর, ডাকপাড়া, চর আইরমারী, মদনেরচরসহ কয়েকটি গ্রামের তিন শতাধিক মানুষ নদী ভাঙনের শিকার হয়েছেন।

জামালপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম বলেন, অসময়ে দেওয়ানগঞ্জে ব্রহ্মপুত্র ও বকশীগঞ্জে দশানী নদীতে তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভাঙন প্রতিরোধের জন্য জরুরি ভিত্তিতে আমাদের প্রধান কার্যালয়ে প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। সেটা অনুমোদন  পেলে ওই অঞ্চলের ভাঙন প্রতিরোধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।