ময়মনসিংহ: মায়ানমারের জান্তা সরকারের প্রধান মিন অং হ্লাইং তাঁর একসময়কার ঘনিষ্ঠ সমর্থকদের মধ্যেই সমর্থন হারাচ্ছেন। কেবল তাই নয়, তাঁদের অনেকে আবার তাঁর পদত্যাগও দাবি করেছেন। সমর্থকদের অভিযোগ—মিন অং হ্লাইং একসময়কার অজেয় জান্তাবাহিনীকে খেলো একটি বাহিনীতে পরিণত করেছে, তিনি অনেক স্বার্থপর আচরণ করছেন এবং তাঁর কোনো ‘মেরুদণ্ড’ নেই।
মায়ানমারের সংবাদমাধ্যম ইরাবতীর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মিন অং হ্লাইংয়ের অনেক সমর্থকই বলছেন, ‘মিন অং হ্লাইংকে চলে যেতে হবে।’ এমনকি অনেক সমর্থক প্রকাশ্যেই এই দাবি করছেন। তাঁদের অনেকে মিন অং হ্লাইংকে অযোগ্য বলেও আখ্যা দিয়েছেন।
জান্তা সরকার ও মিন অং হ্লাইংয়ের অন্যতম সমর্থক ছিলেন ফুটবলার মং মং। সম্প্রতি তিনি তাঁর সুর বদলেছেন। তিনি বলেছেন, ‘মিন অং হ্লাইং যে তিন বছর পেয়েছিলেন, তাঁর জন্য সেইটাই যথেষ্ট।’ নিজের ইউটিউব চ্যানেলে তিনি এই ঘোষণা দেন। তাঁর পথ অনুসরণ করে আরও অনেকেই একই ধরনের মন্তব্য করেছেন।
মং মং তাঁর ভিডিওতে বলেন, ‘উ মিন অং হ্লাইং গত তিন বছরে কোনো সক্ষমতাই প্রদর্শন করতে পারেননি, যার ফলে দেশটি ঐতিহাসিক লজ্জা ও মন্দার মধ্যে পড়েছে। তিনি রাজনীতি ও অর্থনীতিসহ প্রতিটি ক্ষেত্রেই অযোগ্য…জবাবদিহির সঙ্গে তাঁর পদত্যাগ করা উচিত।’
সম্প্রতি মায়ানমারের জান্তাবাহিনীর প্রায় আড়াই হাজার সেনা বিদ্রোহী সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর কাছে আত্মসমর্পণ করেছে। এর মধ্যে ছয় ব্রিগেডিয়ার জেনারেলসহ দুই শতাধিক বিভিন্ন র্যাংকের সেনা কর্মকর্তাও রয়েছেন। সম্প্রতি ইরাবতীর আরেক প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, বিদ্রোহীদের কাছে হেরে প্রায় ৪০০ সেনা ভারতে পালিয়ে গেছে।
জান্তাবাহিনী রাখাইন, চিন এবং অন্যান্য উত্তরাঞ্চলীয় রাজ্যে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির মুখোমুখি হয়েছে। এ দুই রাজ্যের অধিকাংশ এলাকাই বিদ্রোহী গোষ্ঠীদের জোট থ্রি ব্রাদার্স অ্যালায়েন্সের নিয়ন্ত্রণে। সব মিলিয়ে বিভিন্ন রাজ্যে জান্তাবাহিনী বিগত কয়েক মাসে অন্তত ৩০টি শহরের নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে। এই অবস্থায় জান্তা সরকারের সমালোচনায় মুখর হয়েছে তাদের একসময়কার সমর্থকেরা।
মায়ানমারের সংবাদমাধ্যম এনপি নিউজের সাংবাদিক কায়াও মিয়ো মিন একসময় ব্যাপকভাবে জান্তাবাহিনীর কর্মকাণ্ডকে সমর্থন করেছেন। সম্প্রতি তিনিও জান্তাপ্রধানের সমালোচনায় মুখর হয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘আমাদের লজ্জা হয় যে, আমাদের “আত্মসমর্পণ” শব্দটাও ব্যবহার করতে হচ্ছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘২ হাজারের বেশি সৈন্য ও তাদের পরিবারের আরও ১ হাজারের বেশি সদস্য আত্মসমর্পণ করায় আমি লজ্জিত।’
অনেক জান্তা সমর্থকই এখন মনে করছেন, দেশজুড়ে যে বিদ্রোহ মাথাচাড়া দিয়েছে, তা নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে মিন অং হ্লাইং খুবই নমনীয়। যদিও তিনি বিগত তিন বছরে নিজের ক্ষমতা সুসংহত করতে কয়েক হাজার মানুষকে ঠান্ডা মাথায় হত্যা করেছেন। এমনকি তিনি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে চলমান লড়াইয়ে বেসামরিক নাগরিকদের ওপর হামলা চালানোর বিষয়টিকেও নীরব সমর্থন দিয়েছেন।