ময়মনসিংহ: স্বাধীন বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর সবচেয়ে বড় সঙ্কটের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছে। দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ভূরাজনৈতিক গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় অবস্থানের কারণে বৈশ্বিক কূটনীতির বেড়াজালে আটকে গিয়েছে মায়ানমার থেকে আগত এক মিলিয়নের অধিক রোহিঙ্গা ইস্যুতে
জেনেটিকালি বাংলাদেশ ভূখন্ডের মানুষ আবেগী, মানবিক ও অতিথিপরায়ণ। আর বাঙালিদের এই সহজ-সরল গুণটিই এখন তাদের কপাল পোড়ার কারণ হয়েছে। আন্তর্জাতিক অস্ত্র ব্যবসায়ীরা আপাত শান্তিপূর্ণ এই অঞ্চলে সত্বর একটি যুদ্ধের কামনা-বাসনা নিয়ে লকলকে লোভাতুর নয়নে অধীর আগ্রহে অপেক্ষমান।
রাখাইনে খনিজ সম্পদের অঢেল আধার আর কৌশলগত সুবিধাজনক ভূখন্ডে শিল্পায়নের সহজ শর্তে শক্তিশালী আঞ্চলিক প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোর উদার সহযোগিতা থেকে বাংলাদেশ বঞ্চিত হচ্ছে।
দশ লক্ষ উদ্বাস্তু মানুষের জীবনের সাথে দুইদেশের কোটি মানুষের বোঝাপড়া জড়িত। দুই প্রতিবেশী জাতি বার্মিজ-বাঙালি পিপল-টু-পিপল কানেকশন এতটাই নড়বড়ে যে, বার্মার সামরিক জান্তার সাথে বাংলার গণতান্ত্রিক কর্তৃপক্ষের যোগাযোগ অনেকটাই সৎভাই-সুলভ! অথচ দুইজাতির মধ্যে উদার সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক থাকলে বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক দাদাদের দাদাগিরি উপেক্ষা করে নিজেরাই এহেন সমস্যার স্থায়ী সমাধান করা সম্ভবপর হতো।
বাংলাদেশের জনগণ গণতন্ত্রের সুবিধা নিয়ে সরকারকে “মানবিক” চাপ দিয়ে রোহিঙ্গাদের জন্য সীমান্ত খুলতে বাধ্য করতে পারলেও, বার্মার শক্তিশালী সামরিক জান্তার উপর চৈনিক-প্রভাবিত সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ব্যপক জনমত গড়ে উঠতে পারেনি। দুইদেশের মানুষে-মানুষে আন্তঃযোগাযোগ থাকলে গণতান্ত্রিক বাঙালির দ্বারা বার্মিজরা প্রভাবিত হতে পারতেন।
কিন্তু, নিষ্ঠুর বাস্তবতা এই যে, বার্মার শিক্ষিত প্রজন্ম থেকে শুরু করে সিনিয়র সিটিজেন -অধিকাংশ বার্মিজ ভয়ঙ্করভাবে ধর্মীয় ভাবাবিষ্ট এবং উগ্র সাম্প্রদায়িক জাতীয়তাবাদী। ফলে, চতুর বৃহৎ প্রতিবেশী চীন ও ভারত কুসংস্কারাচ্ছন্ন ও সামরিক জান্তা কবলিত বার্মাকে “নিয়ন্ত্রণ” করতে পারছে। আর রোহিঙ্গামুক্ত রাখাইনে তীব্র শিল্প প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হয়েছে। চীন-ভারতের এই দাদাগিরিতে সৃষ্ট সঙ্কটে দূরবর্তী মোড়লরাও নড়েচড়ে বসেছে, অস্ত্রব্যপারী ইঙ্গমার্কিন শক্তিও তাই ইনিয়েবিনিয়ে যুদ্ধাবস্থা তৈরীতে অধিকতর আগ্রহী হয়েছে।
আর মোড়লদের এহেন নানাবিধ ষড়যন্ত্রে মায়ানমার বেনিফিশিয়ারী হলেও, উদীয়মান মানবিক বাংলাদেশ পড়ে গেছে “মাইনকা চিপায়”! জোর কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালিয়েও সম্পদ ও সৌন্দর্য্যের ভয়াবহ ক্ষতি থেকে মুক্তি পাচ্ছে না বাংলাদেশ। অদূর ভবিষ্যতে এই “মানবিক” সঙ্কটের যৌক্তিক সমাধান কী হবে -তাও এখন ধোঁয়াশার বালুচরে ঘুরপাক খাচ্ছে।
রাষ্ট্র এবং সুনাগরিকের সামনে এখন একটাই পথ -“আপাতত অমানবিক হয়ে ওঠো, সঙ্কটের সমাধান শেষে মানবিক হইও। কেননা পিঠ ঠেকেছে দেয়ালে!”
লেখক: শিক্ষার্থী, সলিমুল্লাহ মুসলিম হল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়